সাপ্তাহিক সমস্যা-১০: আমাদের পরিচিত জ্যামিতিক জামি তার বোর্ডে ইচ্ছেমতো কয়েকটি সংখ্যা লিখলো। সংখ্যাগুলো হলো- 1, 3, 4, 6, 8, 9, 11, 12, 16। এর মাঝে সংখ্যাভাবুক সৌভিক জামির বাসায় এসে হাজির। কিছুক্ষণ পর জামি আর সৌভিক মিলে একটা মজার খেলা শুরু করলো। খেলার নিয়ম খুবই সহজ, প্রত্যেকে বোর্ড থেকে একটা করে সংখ্যা মুছে ফেলবে। প্রথমে সৌভিক একটি সংখ্যা মুছে ফেললো, তখন জামিও একটি সংখ্যা মুছে ফেললো। আবার সৌভিক, আবার জামি, এভাবে খেলা চলতে লাগলো। খেলার এক পর্যায়ে প্রত্যেকে 4টি করে সংখ্যা মুছে ফেললো, তখন দেখা গেলো যে, সৌভিক যে সংখ্যাগুলো মুছে ফেলেছে, সেগুলোর যোগফল জামির মুছে ফেলা সংখ্যার যোগফলের 3 গুন! সবার শেষে একটি সংখ্যা বোর্ডে রয়ে গেলো। তুমি কি বলতে পারবে সংখ্যাটি কত?
Problem Weekly-10: Our known guy, Geocentric Jami, arbitrarily wrote a few numbers on his board. The numbers are- 1, 3, 4, 6, 8, 9, 11, 12, and 16. In the meantime, the number-lover Souvik appeared at Jami’s house. Then Jami and Souvik started to play an exciting game together. The rule of the game is pretty simple: every person will delete a number from the board! The game started with Souvik; he deleted a number first, then Jami deleted a number. In this way, each deleted 4 numbers at one moment in the game. It turned out that the sum of the numbers that Souvik deleted, was 3 times the sum of the numbers Jami deleted! One number will remain on the board at the end of the game. Well, can you tell us which number it was?
সমাধান: জামির বোর্ডে লেখা সংখ্যাগুলো হলো- 1, 3, 4, 6, 8, 9, 11, 12, and 16 এই 9 টি সংখ্যার যোগফল হলো- 70
যেহেতু জামি এবং সৌভিক পর্যায়ক্রমে একটি করে সংখ্যা মুছে ফেলেছে, তার মানে তারা প্রত্যেকেই চারটি করে সংখ্যা মুছতে পারবে এবং সবশেষে বোর্ডে একটি সংখ্যা অবশিষ্ট থাকবে।
ধরা যাক, জামির মুছে ফেলা সংখ্যাগুলোর (4 টি সংখ্যা) যোগফল: x
সুতরাং, সবগুলো মুছে ফেলা (8টি সংখ্যা) সংখ্যার যোগফল = 4x
এখান থেকে আমরা বলতে পারি, জামির মুছে ফেলা সংখ্যার যোগফল + সৌভিকের মুছে ফেলা সংখ্যার যোগফল + অবশিষ্ট সংখ্যা = 70 বা, x + 3x + অবশিষ্ট সংখ্যা = 70 বা, 4x = 70– অবশিষ্ট সংখ্যা
এই সমীকরণের বাম পাশে রয়েছে 4x যা অবশ্যই 4 দ্বারা বিভাজ্য হবে। তাহলে, ডান পাশে যা থাকবে সেটিও অবশ্যই 4 দ্বারা বিভাজ্য হবে।
এখন, ডানপাশে রয়েছে (70 – অবশিষ্ট সংখ্যা)। এখান থেকে আমরা বলতে পারি, 70 কে 4 দ্বারা ভাগ করলে আমরা যে ভাগশেষ পাবো, বোর্ডের অবশিষ্ট সংখ্যাটিকেও 4 দ্বারা ভাগ করলে একই ভাগশেষ পাবো!
70 কে 4 দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ থাকবে 2।
অতএব, বোর্ডের অবশিষ্ট সংখ্যাটিকেও 4 দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকতে হবে 2 (এটা আমরা কিভাবে নিশ্চিত হলাম বলতে পারবে?)
এখন, প্রদত্ত সংখ্যাগুলোর মাঝে একটি সংখ্যাই আছে যাকে 4 দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ থাকবে 2 এবং সেটি হলো 6।
তার মানে বোর্ডে অবশিষ্ট সংখ্যাটি হলো 6।
সুতরাং, 4x = 70 – 6
বা, 4x = 64
বা, x=16
তাহলে বলা যায়, জামির মুছে ফেলা সংখ্যা- 1, 3, 4, 8 সৌভিকের মুছে ফেলা সংখ্যা- 9, 11, 12, 16 এবং বোর্ডে থেকে যাওয়া সংখ্যা- 6
এটাই আমাদের এ সপ্তাহের গাণিতিক সমস্যার উত্তর। অনেকেই আমাদের কাছে এই সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন, আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের অভিভূত করেছে। মোট ৫ জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি আমরা, তাই সাপ্তাহিক সমস্যা-১০ এ আমাদের মোট বিজয়ী৫ জন!
যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
সাপ্তাহিক সমস্যা-০৯: আমাদের পরিচিত জ্যামিতিক জামি একটি পুরনো গাড়ি কিনেছে। গাড়ি নিয়ে কোথাও গেলে মোট কত দুরত্ব অতিক্রম করা হয়েছে, সেটি দেখা যায়। কিন্তু ঝামেলা হলো, গাড়ির ডিসপ্লে বোর্ডে ৪ অঙ্কটি দেখায় না। এর মানে, গাড়িটিতে যে সংখ্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দেখায় তা হলো- ০, ১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৫……ইত্যাদি। যাই হোক, জামি একদিন সকালে নিজের বাসা থেকে গাড়ি চালিয়ে তার বন্ধু সংখ্যাভাবুক সৌভিকের বাসায় বেড়াতে গেল। সৌভিকের বাড়িতে পৌঁছানোর পর জামি দেখলো যে, গাড়িতে মোট ২০২৩ কি. মি. দুরত্ব দেখাচ্ছে। জামি তার বাসা থেকে সৌভিকের বাসার আসল দুরত্ব বের করতে চায়। তুমি কি জামিকে সাহায্য করতে পারবে?
Problem Weekly-09: Our known guy, Geometric Jami, has bought an old car. From the display board of the car, it can be seen how far the car has traveled in a trip. But the problem is that the particular digit “4” does not show in the display board of the car. This means that the numbers that appear in the car periodically are- 0, 1, 2, 3, 5, 6, 7, 8, 9, 10, 11, 12, 13, 15…and so on. One morning Jami came out of his house and drove to his friend Number-lover Souvik’s house. Upon reaching Souvik’s house, Jami saw that the car showed a total distance of 2023 km. Jami wanted to calculate the actual distance from his house to the house of Souvik. Can you help Jami to find the answer?
সমাধান: এ সমস্যা সমাধানের শুরুতেই চলো একটা ছক করে ফেলি। গাড়িতে দেখানো অতিক্রান্ত দুরত্ব বাস্তবে কত দুরত্ব হবে, তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
আসল অতিক্রান্ত দুরত্ব
গাড়িতে দেখানো অতিক্রান্ত দুরত্ব
১
১
২
২
৩
৩
৪
৫ (কেননা গাডিতে ৪ সংখ্যাটি দেখায় না)
৫
৬
৬
৭
৭
৮
৮
৯
৯
১০
১০
১১
১১
১২
১২
১৩
১৩
১৫ (কেননা গাডিতে ৪ সংখ্যাটি দেখায় না)
১৪
১৬
ছক: গাড়িতে অতিক্রান্ত দুরত্ব বনাম আসল দুরত্ব
এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, গাড়িতে দেখানো দুরত্ব আর প্রকৃত অতিক্রান্ত দুরত্ব একই না। তাহলে আমরা বলতে পারি গাড়িতে যত কিলোমিটার দেখাবে আসল দুরত্ব তার চেয়ে কম হবে (তার থেকে কি বেশি হওয়া সম্ভব?)। আচ্ছা কত কম হবে বলে তোমাদের মনে হয়? ১/ ২/ ৫ না আরো অনেক বেশি? চলো দ্রুত কিছু হিসেব করে ফেলি!
একটু মাথা খাটালে আমরা বুঝবো যে, ১ থেকে শুরু করে গাড়িতে যে সংখ্যা দেখাবে এর মধ্যে যতগুলো ৪ অংক বিশিষ্ট সংখ্যা রয়েছে, ঠিক তত কম হবে আমাদের প্রকৃত অতিক্রান্ত দুরত্ব! কিছুটা কঠিন লাগছে কথাটা? তাহলে কয়েকবার করে পড়ে নিচের সমাধানের সাথে মিলিয়ে নাও। তাহলে আমরা ঝটপট বের করে ফেলি, ১ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে কতগুলো সংখ্যায় ৪ অঙ্কটি আছে।
১ থেকে ৯৯ এর মধ্যে ৪ অঙ্ক রয়েছে মোট- ১৯ টি সংখ্যায় (৪, ১৪, ২৪, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫৪, ৬৪, ৭৪, ৮৪, ৯৪)।
একইভাবে, ১০০ থেকে ৯৯৯ এর মধ্যে ৪ অঙ্কটি রয়েছে মোট- (১৯ × ৮) +১০০ = ২৫২ বার।
একই ভাবে, ১০০০ থেকে ১৯৯৯ এর মধ্যে ৪ অঙ্কটি রয়েছে মোট- (১৯ × ৯) + ১০০ = ২৭১ বার।
একইভাবে, ২০০০ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে ৪ অঙ্কটি রয়েছে মোট- ২ বার।
(আচ্ছা, এই হিসেবগুলো আমরা কি ঠিকঠাক করতে পারলাম? একটু মিলিয়ে নিও তো!)
তাহলে ১ থেকে ২০২৩, এই ব্যবধানে মোট সংখ্যা যেখানে ৪ অঙ্কটি আছে = ১৯ + ২৫২ + ২৭১ + ২ = ৫৪৪ টি
তাহলে জ্যামিতিক জামির বাসা থেকে সংখ্যাভাবুক সৌভিকের বাসার আসল দুরত্ব হলো- (২০২৩-৫৪৪) = ১৪৭৯ কিলোমিটার
এটাই আমাদের এ সপ্তাহের গাণিতিক সমস্যার উত্তর। অনেকেই আমাদের কাছে এই সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন, আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের অভিভূত করেছে। মোট ৪ জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি আমরা, তাই সাপ্তাহিক সমস্যা-০৯ এ আমাদের মোট বিজয়ী৪ জন!
যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
সেকেন্ডারি ক্যাটাগরি বলতে মূলত নবম, দশম, এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ও–লেভেলের শিক্ষার্থীদের বুঝায়। এ ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে বাছাই পরীক্ষা, আঞ্চলিক পর্যায় এবং জাতীয় পর্বের প্রশ্নগুলোতে একইসাথে একাডেমিক সিলেবাস এবং আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড সমমানের প্রস্তুতি, এই দুইটি বিষয়ের উপর বেশি জোর দেয়া হয়। একজন শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে উঠার পর গণিতের নানা বিষয়ের সাথে প্রথমবারের মতো পরিচিত হয়, যেমন- ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতির নতুন কিছু ধারণা, দ্বিপদী, স্থানাংক জ্যামিতি, প্রাথমিক ক্যালকুলাসের ধারণা ইত্যাদি।
একজন শিক্ষার্থীর সেকেন্ডারী ক্যাটাগরির প্রশ্নগুলো আয়ত্ত্বে আনার জন্য গণিতের বিভিন্ন বিষয়ে ভালো ধারণা থাকা দরকার। একইসাথে, শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানে আগ্রহ থাকা, প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করার অভ্যাস থাকাটাও জরুরী। আজকে আমরা সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির বিভিন্ন বিষয় ও কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবো।
বীজগণিত: সেকেন্ডারী ক্যাটাগরির জন্য বিভিন্ন ধরণের ফাংশন, সমীকরণ, অসমতা এই বিষয়গুলো জানা থাকা জরুরী। নিজ শ্রেণির একাডেমিক বই থেকে এই বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করতে হবে। পাশাপাশি, এসবের উপর আরো কিছু একাডেমিক বই পড়তে পারলে খুব ভালো হয়। কয়েকটি সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করি-
ফাংশনের গাণিতিক সমস্যা নিয়ে কিন্তু অনেকেরই চিন্তা থাকে, কঠিন মনে হয় শিক্ষার্থীদের কাছে। এক্ষেত্রে, একটা উপায় হতে পারে সমস্যাটিকে ছোট ছোট আকারে ভেঙ্গে চিন্তা করা কিংবা ছোট ছোট মানের জন্য ফাংশনের মান বের করা। একটা সমস্যা দেখা যাক-
সংখ্যাতত্ত্ব: সংখ্যা নিয়ে আলোচনা শুরু করা হলে অনেকগুলো বিষয় চলে আসে। যেমন- বিভাজ্যতা, মৌলিক সংখ্যা, ভাগশেষ সংক্রান্ত বিভিন্ন থিওরেম, সংখ্যার উৎপাদক নির্ণয় ইত্যাদি। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমরা একাডেমিক বইতে কিছুটা তাত্ত্বিক ধারণা পেলেও চিন্তা করার মত যথেষ্ঠ সমস্যা সাধারণত পাই না । এজন্য, এসব আয়ত্ত্বে আনার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গণিতের বই, আর্টিকেল, ব্লগ ইত্যাদি নিয়মিত পড়া যেতে পারে। আমরা একটি সমস্যা আলোচনা করি-
গণনা: গণনার ক্ষেত্রে মুলত বিন্যাস ও সমাবেশের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। নবম-দশম শ্রেণিতে যদিও দ্বিপদী এর একটি অধ্যায় আছে, তবে এর চেয়ে বেশি শিখতে চাইলে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বইয়ের বিন্যাস ও সমাবেশ এর অধ্যায় দেখে নিতে হবে। এছাড়া, পিজিওন হোল প্রিন্সিপল, কালারিং, গ্রাফ, সম্ভাব্যতা ইত্যাদি ধারণাগুলোও কাজে লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্য কোন টপিকের সমস্যার মধ্যে গণনার ধারণা ব্যবহার করে সমাধানে পৌঁছাতে হয়। যেমন নিচের সমস্যাটি দেখা যাক-
জ্যামিতি: জ্যামিতির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম একজন শিক্ষার্থীকে নিজ বইয়ের উপর ভালো দখল রাখতে হবে। আমাদের এনিসিটি বইয়ের জ্যামিতি অংশটুকু চমৎকারভাবে গুছানো আছে। উপপাদ্য নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। বিশেষ করে, সর্বসমতা কিংবা সদৃশ সংক্রান্ত উপপাদ্য, বৃত্তের ধারণা, এগুলো খুবই কাজে লাগে। উচ্চতর গণিত বইয়ের জ্যামিতি অংশটুকুও বেশ কাজের। এছাড়া, স্থানাংক জ্যামিতি কিংবা ত্রিকোণমিতির ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান খুব সহজে করা যায়। আমরা একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি-
আজ এ পর্যন্ত থাক। আশা করছি, এই লিখা থেকে সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। আসলে অলিম্পিয়াডে ভালো করতে হলে বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। আমাদের সাইটে সাপ্তাহিক সমস্যা বিভাগে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয়, কেউ চাইলে এগুলো নিয়মিত সমাধান করতে পারে।
পরবর্তী ব্লগে আমরা হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। এছাড়াও, বইয়ের তালিকা নিয়ে খুব শীঘ্রই আমাদের আরো ব্লগ প্রকাশিত হবে। সে পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের সাথে থাকুন, গণিতের সাথে থাকুন।
সাপ্তাহিক সমস্যা-০৮: সংখ্যা ভাবুক সৌভিক তার বন্ধু জ্যামিতিক জামিকে বিভিন্ন সংখ্যার বর্গ এবং বর্গমূল কিভাবে বের করা যায় সেটি শিখাচ্ছে। কোন একটি সংখ্যাকে ঐ সংখ্যা দিয়েই একবার গুণ করা হলে প্রাপ্ত সংখ্যাকে আমরা বর্গ সংখ্যা বলি।যেমন: 3 × 3= 9, 5 × 5 = 25 ইত্যাদি। আবার, একই ধারণা দিয়ে কিন্তু বর্গমূলও বের করা যায়। যেমন: √25 = 5, √9 = 3 । কিন্তু খেয়াল রেখো, √26 বা √30 কিন্তু পূর্ণসংখ্যা না! এসব শেখানোর পর সৌভিক জামিকে একটি মজার গাণিতিক সমস্যা দিলো সমাধান করার জন্য। সমস্যাটি ছিলো এরকম: যদি 1 ≤ a ≤16 এবং 1 ≤ b ≤49 হয়, তাহলে কতগুলো a ও b এর মানের জন্য √(a + √b) এই রাশিটির মান পূর্ণসংখ্যা হবে? জামি কিছুক্ষণ চেষ্টা করে 10টি সম্ভাব্য উত্তর বের করলো। তোমরা কি বলতে পারবে, জামির উত্তর ঠিক আছে কি না?
Problem Weekly-08: Number-lover Souvik is teaching his friend Geometric Jami how to find the square and square root of different numbers. If a number is multiplied by the same number once, we call it a square number. Like, 3 × 3= 9, 5 × 5 = 25. Again, the square root can be derived with the same idea such as √25 = 5, √9 = 3. Note that √26 or √30 are not integers! After discussing this topic, Souvik gives Jami an interesting problem to find a solution to. The Problem is like that: If 1 ≤ a ≤16 and 1 ≤ b ≤49, then how many ordered pairs of integer (a, b) are given that the values of √(a + √b) are an integer? Jami is trying for a while to find out 10 possible answers. Well, can you tell if Jami’s answer is correct or not?
সমাধান: √(a + √b) এর মান তখনই পূর্ণসংখ্যা হবে যখন a + √b এর মান পূর্ণবর্গ সংখ্যা হবে।
যেহেতু a ও b এর অনেকগুলো মান সম্ভব, কাজেই আমাদের দেখতে হবে কোন কোন a ও b এর মানের জন্য a + √b একটি পূর্ণবর্গ সংখ্যা হয়।
প্রশ্নমতে, 1 ≤ b ≤49, তাই √b এর মান হতে পারে শুধুমাত্র 1, 2, 3, 4, 5, 6 এবং 7 (আমরা কিভাবে নিশ্চিত হলাম? ভেবে দেখো তো!)
আচ্ছা, আমরা বর্গসংখ্যার একটা ছক তৈরি করে সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করি:
a এর মান
b এর মান
√b এর মান
a + √b এর মান
√(a + √b) এর মান
1
9
3
4
2
2
4
2
4
2
2
49
7
9
3
3
1
1
4
2
3
36
6
9
3
4
25
5
9
3
5
16
4
9
3
6
9
3
9
3
7
4
2
9
3
8
1
1
9
3
9
49
7
16
4
10
36
6
16
4
11
25
5
16
4
12
16
4
16
4
13
9
3
16
4
14
4
2
16
4
15
1
1
16
4
তাহলে সবমিলিয়ে মোট ভিন্ন ভিন্ন 17 টি a এবং b এর মান পাওয়া গিয়েছে যাদের জন্য √(a + √b) এর মান একটি পূর্ণসংখ্যা হবে। অর্থাৎ, জামির উত্তর ভুল ছিলো!
অনেকেই আমাদের কাছে এই সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন, আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের অভিভূত করেছে। মোট ৯ জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি। তাই সাপ্তাহিক সমস্যা-০৮ এ আমাদের মোট বিজয়ী৯ জন।
যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
সাপ্তাহিক সমস্যা-০৭: জ্যামিতিক জামি তার রুমের দেয়ালে একটি মাল্টিকালারের বোর্ড বসিয়েছে। জামির ইচ্ছা তার বোর্ডে সারাদিন ধরে বিভিন্ন জ্যামিতিক ছবি আকঁবে। বোর্ডটিতে তিনটি রঙ আছে। সংখ্যাভাবুক সৌভিক জামিদের বাসায় একদিন বেড়াতে এসে এরকম বোর্ড দেখে অনেক খুশী হলো। সৌভিক বোর্ডের পরিমাপ জিজ্ঞেস করলে জামি উত্তর দিলো যে, সে পুরোপুরি মাপ জানে না। তবে সে কিছু তথ্য দিলো সৌভিককে। সৌভিক কিছুক্ষণ চিন্তা করে বোর্ডটির দৈর্ঘ্য প্রস্থ সবকিছু একসাথে বলে দিলো। আচ্ছা, তোমরা কি সৌভিকের মত চিত্রের দেয়া তথ্য থেকে বোর্ডটির পরিসীমা বের করতে পারবে?
Problem Weekly-07: Geo-centric Jamie has placed a multicolor board on the wall of his room. Jamie wishes to draw various geometric pictures on his board throughout the day. There are three colors on the board. One day, Souvik came to visit Jami’s house and became very happy to see such a board. When Souvik asked for the dimension of the board, Jami replied that he did not know all the dimension. However, Jami gave some information to Souvik regarding the board. Souvik thought for a while and said everything about the length and breadth of the board. Well, from the given diagram, can you figure out the perimeter of the board like Souvik?
সমাধান: চিত্র অনুযায়ী লাল, হলুদ এবং সবুজ রঙ দ্বারা চিহ্নিত অংশের উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য একই।
ধরি, বোর্ডের উচ্চতা = y একক
তাহলে লাল এবং হলুদ রঙ দ্বারা চিহ্নিত অংশের ক্ষেত্রফল হবে-
10y = 120 + x … … …(i)
আর সবুজ এবং হলুদ রঙ দ্বারা চিহ্নিত অংশের ক্ষেত্রফল হবে-
12y = 150 + x … … …(ii)
এখন (ii)নং সমীকরণ থেকে (i)নং সমীকরণ বিয়োগ করে পাই-
12y – 10y = 150 + x – (120 + x) বা, 2y = 30 বা, y = 15
তাহলে, সবুজ রঙ চিহ্নিত অংশের প্রস্থ আমরা সহজেই বের করতে পারবো।
যেহেতু, ক্ষেত্রফল = উচ্চতা × প্রস্থ। সুতরাং,
150 = 15 × প্রস্থ বা, প্রস্থ = 10 একক
তাহলে, হলুদ রঙ চিহ্নিত অংশের প্রস্থ = 12 – 10 = 2 একক
জুনিয়র ক্যাটাগরি বলতে আসলে ষষ্ঠ থেকে অষ্ঠম শ্রেণির এর মধ্যে অন্তর্গত শিক্ষার্থীদের বুঝায়। এই ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা প্রথম বারের মত ষষ্ঠ শ্রেণি গণিতের অনেক মজার বিষয়ের সাথে পরিচিতি লাভ করে। যেমন: বীজগণিত, জ্যামিতির উপপাদ্য,পরিমিতি ইত্যাদি। এজন্য, অনেক শিক্ষার্থীরা কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে এসব বিষয়ে ভালো ধারণা লাভ করবে। জ্যামিতির উপপাদ্যের ক্ষেত্রে কোনো কিছু প্রমাণ করা যুক্তির মত কাজ করে; আমরা পূর্ববর্তী কিছু উপপাদ্য দিয়ে নতুন কোনো উপপাদ্য প্রমাণ করি কিংবা নতুন কোনো জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করে থাকি।
আমরা ইতোমধ্যে আগের লিখাগুলোতে বলেছি যে, অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- মূলত এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে তুলনায় জুনিয়র ক্যাটগরিতে বীজগণিত সম্পর্কিত বেশী সমস্যা দেখা যায়। আগের বারের মত এবারো জুনিয়র ক্যাটাগরির জন্য আমরা কিছু সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
সংখ্যাতত্ত্ব: সংখ্যার বেলার বিভিন্ন ধরণের সংখ্যা যেমন মৌলিক সংখ্যা , যৌগিক সংখ্যা কিংবা বিভাজ্যতা বা ভাগশেষ এই বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ন। এরপর গড়, ঐকিক নিয়ম ,শতকরা, লাভ ক্ষতি এই ধরণের গাণিতিক ধারণা থেকেও সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া প্যাটার্ন এবং সিরিজ এর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন নিচের এই সমস্যাটি দেখা যাক-
(𝟕×𝟕×𝟕×⋯×𝟕). Here, there are 𝟕 for 𝟐𝟏 times. What will be the remainder if the product is divided by 𝟏𝟎?এখানে, 21 বারের জন্য 7 কে 21 বার গুণ করা হয়েছে আছে। যদি গুণফলটিকে 10 দ্বারা ভাগ করা হয় তাহলে ভাগশেষ কত থাকবে?
এই সমস্যা সমাধানের অনেক উপায় বা টেকনিক রয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াডে অনেকের যে ব্যাপার নতুন করে জেনে থাকে সেটা হলো Modular arithmatic বা mod। তবে আমরা এখানে আলোচনা করবো কিভাবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সমস্যাকে ক্ষুদ্র আকারে চিন্তা করতে পারে এবং সমস্যার ভিতরে বিভিন্ন প্যাটার্ন খুঁজে পেতে পারে। যেমন কয়েকটা উদাহরণ দেখি আমরা-
এখানে আমরা 7 এর সূচক এর প্রথম 12 টার মান উল্লেখ করেছি। আচ্ছা, এই বিশাল সংখ্যার মধ্যে কি কোনো প্যাটার্ন বা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়? আচ্ছা, কেনই বা আমরা চারটি চারটি করে আলাদা লিখলাম সংখ্যাগুলোকে? তোমরা কি কিছু বুঝতে পেরেছো? চিন্তা করে দেখো তো!
আচ্ছা, বিভাজ্যতা নিয়ে এই সমস্যাটি দেখা যাক-
𝟑 _ _ 𝟕𝟒 একটি পাঁচ অংকের সংখ্যা যা কিনা 99 দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে সংখ্যাটি কত? 𝟑 _ _ 𝟕𝟒 is a five-digit number divisible by 𝟗𝟗. What is the number?
একটু খেয়াল করো যে, 11 দ্বারা বিভাজ্য এবং 9 দ্বারা যদি বিভাজ্য হয় তাহলেই কিন্তু সংখ্যাটি 99 দ্বারা বিভাজ্য হবে। আবার, 9 দ্বারা বিভাজ্য হওয়ার শর্ত হলো, সংখ্যাটির অংকগুলোর যোগফল 9 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে। আচ্ছা, ধরে নিই যে, সংখ্যাটি 3xy74 তাহলে, 9 দ্বারা বিভাজ্য হতে হলে আমরা বলতে পারি 3 + x + y + 7 + 4 এর মান 9 এর গুনিতক হতে হবে। এখন, 9 এর গুণিতক হলো 9, 18, 27, 36….. তাহলে, 14 + x + y = 18 বা 27 হতে পারে কিন্তু 36 বা তার বেশি হতে পারবে না! আবার, 11 দ্বারা বিভজ্য হওয়ার জন্য 3 + y + 4 – (x + 7) = 0 অথবা 11 হবে। এখান থেকে পাবো, y – x = 0 অথবা 11 তাহলে, y = x বা y = x + 11 এখান থেকে কিন্তু সহজেই y ও x এর মান বের করে ফেলা যাবে। তাই না? ঝটফট বের করে ফেলো তাহলে।
বীজগণিত: বীজগণিতের ক্ষেত্রে দ্বিঘাত সমীকরণ, সহসমীকরণ, উৎপাদকে বিশ্লেষণ বিভিন্ন বীজগাণিতিক রাশির মান নির্ণয় ইত্যাদি টপিকে ভালো ধারণা রাখতে হয়। একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক-
এখান থেকে ধারণা নিয়ে তোমরা তাহলে সমস্যাটি সমাধান করে ফেলো।
গণনার ক্ষেত্রে বিন্যাস ও সমাবেশের (Permutation and Combination) প্রাথমিক ধারণা, গণনার যোগজ ও গুণন বিধি যেমন: কতভাবে সাজানো যাবে, কিভাবে সাজানো যাবে এই ধরণের সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া, পায়রা খোপ নীতি (Pigeonhole Principle) বিষয়টিও বেশ মজার। যেমন আমরা নিচের সমস্যটি দেখি-
E বর্ণটি GEBON শব্দটি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হলো। বাকি বর্ণগুলি কতগুলি উপায় বিন্যস্ত করা যেতে পারে যাতে O বর্ণটি শুরুতে না থাকে? The letter E is thrown away from the word GEBON. How many ways can the rest of the letters be jumbled so that O does not appear at the beginning?
এই সমস্যাটিতে মূলত চার বর্ণের একটি শব্দকে কতভাবে সাজানো যেতে পারে সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। 4 টি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ সাজানো যায় 4! উপায়ে। 4! এর মানে হলো 4 × 3× 2 × 1। এখন, এই 24 উপায়ের মধ্যে কিছু শব্দ থাকবে যাদের সামনে O বর্নটি থাকবে, সবগুলোতে কিন্তু থাকবে না। আচ্ছা, তোমরা কি এটার উত্তর বের করতে পারবে?
জ্যামিতি: জ্যামিতির জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্ঠম শ্রেণির বইয়ের জ্যামিতির অংশটুকু ভালোমত জানা থাকতে হবে। বিভিন্ন ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্তের ক্ষেত্রফল, কোণ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর ভালো ধারণা থাকা লাগবে। বিশেষ করে, ত্রিভুজের সর্বসমতা এবং সদৃশতা জানা থাকলে অনেক সমস্যা সমাধানের সহজ হয়ে যায়। আর, পীথাগোরাসের উপপাদ্যটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমনপীথাগোরাসের উপপাদ্যের ব্যবহার দিয়ে নিচের সমস্যাটি সমাধান করা যায়-
নিচের চিত্রের সব ত্রিভুজগুলি সমকোণী ত্রিভুজ এবং AB = AC = CD = DE = EF = 1 হয়, তাহলে BF এর মান কত হবে?If all the triangles in the figure are right-angled triangles and AB = CD = DE = EF = 1 , what will be the value of BF?
যে কোনো সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে আমরা জানি, অতিভূজ2 = লম্ব2 + ভূমি2 পাশের ছবি অনুসারে কিন্তু আমরা বলতে পারি, CB2 = AC2 + AB2
এইখান থেকে কিন্তু আমরা CB এর মান যে √2 সেটি খুব সহজেই বলতে পারি। একইভাবে কিন্তু BD, BE এবং BF এর মান বের করা যায়। ঝটপট তাহলে বের করে ফেলো।
আশা করছি, এই লিখা থেকে জুনিয়র ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। আসলে অলিম্পিয়াডে ভালো করতে হলে বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। আমাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক সমস্যা বিভাগে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয়, কেউ চাইলে এগুলো নিয়মিত সমাধান করতে পারে।
পরবর্তী লিখাতে আমরা সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। সে পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের সাথে থাকুন, গণিতের সাথে থাকুন।
গণিত উৎসবে প্রাইমারি ক্যাটাগরি বলতে আসলে তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বুঝায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকেরা যে প্রশ্নগুলো করে থাকে সেগুলো এরকম: আমি তৃতীয় বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছি, প্রথমবারের মত গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করবো-
কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি?
কোন বই পড়লে ভালো হবে?
কবে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবো?
আমরা ইতোমধ্যে বলেছি যে, মোটাদাগে অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলে ব্যাপারটা বোঝা সহজ হবে। আজকের লিখা মূলত প্রাথমিক ক্যাটাগরির কিছু সমস্যা সমাধান ও প্রস্তুতি নিয়ে।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবই থেকে সংখ্যার স্থানীয় মান, সংখ্যার বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া (যেমন: যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) এসব সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর, ধাপে ধাপে তারা গড়, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ- ক্ষতি নিয়ে ধারণা লাভ করে যা মূলত সংখ্যার বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। গণিত অলিম্পিয়াডে সংখ্যা সংক্রান্ত অনেক ধরণের সমস্যা থাকে যেমন: উৎপাদক, লসাগু, গসাগু, জোড়, বিজোড়, বিভাজ্যতা ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে নিচের এই সমস্যাটি দেখা যাক-
“ফুয়াদের কাছে কিছু আপেল আপেল রয়েছে, 100 টিরও বেশি নয়, 10 টিরও কম নয়। যদি সে একটি আপেল সরিয়ে নেয়, তাহলে অবশিষ্ট আপেল দুইজনের মাঝে সমানভাবে ভাগ করা যেতে পারে। আবার, যদি সে আরেকটি আপেল যোগ করে, তাহলে আপেলগুলো তিনজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা যেতে পারে। ফুয়াদের কাছে থাকা আপেলের সম্ভাব্য পরিমাণ কত ভিন্ন রকমের হতে পারে?”
এখানে প্রশ্ন দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ফুয়াদের কাছে অবশ্যই বিজোড় সংখ্যক আপেল আছে! কারণ একটি আপেল সরিয়ে রাখার পর অবশিষ্ট আপেল দুই জনের মাঝে সমান ভাবে ভাগ করে দেয়া সম্ভব হয়, শুরুতে জোড় সংখ্যক আপেল থাকলে এটি সম্ভব হতো না। কাজেই, এ তথ্য অনুযায়ী উত্তর হতে পারে 11, 13, 15 ইত্যাদি। আবার, যে পরিমাণ আপেল আছে, তার সাথে আরেকটি আপেল যোগ করলে সেগুলো তিন জনকে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া যাবে। অর্থাৎ, ফুয়াদের কাছে যে পরিমাণ আপেল আছে তার সাথে আরেকটি আপেল যোগ করলে তা তিন দ্বারা বিভাজ্য বা তিনের গুণিতক সংখ্যা হবে! তিনের গুণিতক সংখ্যাগুলো আমরা জানি- 12, 15, 18, 21… এসব। এই দুই তথ্য থেকে আমরা কিন্তু সহজেই সমস্যাটি সমাধান করতে পারি।
আরেকটি সমস্যা নিয়ে আমরা ভেবে দেখতে পারি- “একটি ক্লাসেএমনসংখ্যকশিক্ষার্থীআছেযে,তারা 5 টি বেঞ্চেওবসলেওপ্রতিবেঞ্চেসমানসংখ্যক শিক্ষার্থীবসতেপারে। আবার, 8 টিবেঞ্চেবসলেওপ্রতিবেঞ্চেসমানসংখ্যকশিক্ষার্থী বসতেপারে। ঐক্লাসেকমপক্ষেকতজনশিক্ষার্থীআছে?”
এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমরা যদি 5 এর গুণিতক এবং 8 এর গুণিতকের একটি তালিকা করি, তাহলেই বুঝতে পারবো উত্তর কেমন হতে পারে। (সঠিক উত্তর বের করার দায়িত্ব পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম!)
অলিম্পিয়াডের কিছু সমস্যা আছে যেগুলো একটু ব্যতিক্রম, পড়ে তৎক্ষণাৎ বোঝা যায় না কিভাবে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটা ভালো বুদ্ধি হলো উল্টো পথে হাঁটা বা ব্যাকট্রাকিং! অনেক কঠিন একটা শব্দ ব্যবহার করে ফেললাম! ব্যাপারটা আসলে এতো কঠিন না, নিচের সমস্যাটি দেখলেই বোঝা যাবে-
এখানে, প্রশ্ন অনুযায়ী 2 থেকে শুরু করলে কিন্তু 3 কিংবা 6 এই দুইটাতে যাওয়া সম্ভব। এভাবে চিন্তা করলে অনেক গুলো সংখ্যাতে যাওয়া যায়। আরেকভাবেও কিন্তু চিন্তা করা যেতে পারে; আমরা শুরু করবো 31 থেকে, প্রতি ধাপে 1 বিয়োগ কিংবা 3 দিয়ে ভাগ করার চেষ্টা করে 2 সংখ্যাটি পাওয়ার চেষ্টা করবো, এভাবে উত্তরে পৌঁছানো সম্ভব হবে। (সঠিক উত্তর তাহলে কত হবে? এটাও পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম!)
ছবি: ব্যাকট্র্যাকিং করে ৩১ থেকে ২ এ পৌঁছানোর উপায়
আশা করছি, এই লিখা থেকে প্রাথমিক ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। আসলে অলিম্পিয়াডে ভালো করতে হলে বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। আমাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক সমস্যা বিভাগে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয়, কেউ চাইলে এগুলো নিয়মিত সমাধান করতে পারে।
পরবর্তী লিখাতে আমরা জুনিয়র ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। সে পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের সাথে থাকুন, গণিতের সাথে থাকুন।
সাপ্তাহিক সমস্যা-০৬: সংখ্যাভাবুক সৌভিক তার স্কুলের ফুটবল টিমে খেলার সুযোগ পেয়েছে। সামনেই একটা টুর্নামেন্ট আছে। টুর্নামেন্টের আগে আগে চাপ মুক্ত থাকার জন্য সৌভিক তার দলের সবাইকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে গেলো। মেলাতে বিভিন্ন ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল; ছিল নাগরদোলায় চড়ার ব্যবস্থা, ছিল সার্কাস, পুতুল নাচ ইত্যাদি।দলের সবাই মিলে ঠিক করলো নাগরদোলায় উঠবে। সবাই নাগরদোলায় চড়ে বসলো আর সৌভিক ছবি তোলার জন্য নিচে থেকে গেলো। কিছু ছবি তোলার পর সৌভিক দেখতে লাগলো ছবিগুলো কেমন হয়ছে। দেখার পর মনে মনে বললো , ছবি তো সুন্দরভাবেই উঠেছে! কিচ্ছুক্ষণ পর সৌভিক খেয়াল করলো যে, নাগরদোলায় ১০ জন যেভাবে বসেছে ,তাদের মধ্যে সুন্দর একটা গাণিতিক মিল আছে। পাশাপাশি বসা দুইজন খেলোয়াড়ের জার্সির নম্বরের বর্গের যোগফল, তাদের ঠিক বিপরীতে যে দুইজন খেলোয়াড় বসেছে, তাদের জার্সির নম্বরের বর্গের যোগফলের সমান! এখানে, ছবিতে চার জনের জার্সি নম্বর দেয়া আছে। তোমরা কি বলতে পারবে যে ,বাকি ছয় জন খেলোয়াড়ের জার্সি নম্বরের যোগফল কত হবে?
Problem Weekly-06: Number-lover Souvik has got a chance on his school team to play football. There’s a tournament ahead. Before the tournament, Souvik and his team went to the fair together to stay stress-free. There were various types of entertainment at the fair; there were arrangements for climbing in Nagardola, there were circuses, puppet-show, etc. The team decided to ride on the mighty “Nagordola”. Leaving Souvik, the rest of the team sat on Nagardola and gave Souvik the responsibility of taking pictures of them. So after taking the pictures, Souvik checked the quality of the pictures and said to himself, “The pictures are beautifully taken.” After some moment, Souvik somehow noticed that there was a beautiful mathematical similarity between the 10 players sitting in Nagardola. That is, the sum of the squares of the jersey number of two players is equal to the sum of the squares of the jersey number of two players who sit opposite them. In the picture below, the jersey number of four players is given. Can you say what will be the sum of the jersey number of the remaining six?
এখন, 60 কে আমাদের দুইটি রাশির গুণফল আকারে প্রকাশ করতে হবে। যেমন: (b + e) (b – e) = 60। এক্ষেত্রে, দুইটি রাশির প্রত্যেকটি সংখ্যা অবশ্যই জোড় অথবা বিজোড় হতে হবে। কোন একটি রাশির একটি সংখ্যা জোড় এবং অপরটি বিজোড় হতে পারবে না যেহেতু গুণফল একটি জোড় সংখ্যা!
কাজেই, আমরা বলতে পারি, (b + e) (b – e) = 6 × 10 এবং (b + e) (b – e) = 2 × 30 এই দুটোই সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। সুতরাং, আমাদের সমাধান অনুসারে (b, e) = (8,2) অথবা (16, 14) হবে। একইভাবে, (f, a) = (8,2) বা (16, 14) (d, c) = (8,2) বা (16, 14)
তাহলে, বাকি ছয়জনের জার্সি নম্বরের যোগফল হতে পারে 30 কিংবা 50 কিংবা 70 কিংবা 90। কিভাবে আমরা এটা বলতে পারলাম? নিচে দুইটি উদাহরণ দেখানো হল: যখন a = 2, b = 8, c = 2, d = 8, e = 2, f = 8 হবে, তখন যোগফল হবে 30।
আবার, যখন a = 2, b = 16, c = 2, d = 8, e = 14, f = 8 হবে, তখন যোগফল হবে 50।
এভাবে ভিন্ন ভিন্ন মান ধরে বাকি যোগফলগুলোও দেখানো যাবে। বুঝা যাচ্ছে, আমাদের এই সপ্তাহের সমস্যার বেশ কয়েকটি সমাধান আছে।
অনেকেই আমাদের কাছে এই সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন। তবে, সম্পূর্ণ সমাধান কেউ করতে পারেন নি। বেশিরভাগ সমাধানে আংশিক উত্তর এসেছে, এজন্য, সাপ্তাহিক সমস্যা-০৬ এ কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে না!
পর্ব ২: অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও প্রশ্নাবলি
বর্তমানে আমাদের দেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ধরণের অলিম্পিয়াড হয়ে থাকে। এজন্য, কখন কবে কোথায় অলিম্পিয়াড হয়ে গেলো সেটা বোঝা দায়। আবার দেখা যায়, একই দিনে একাধিক অলিম্পিয়াডের আয়োজন থাকে। অলিম্পিয়াড শেষে অনেকে ফোন/মেসেজ দিয়ে জানায় যে, তারা জানতোই না অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ, পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে! কি একটা অবস্থা!
যাই হোক, আমরা গণিত অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন নিয়ে কথা বলি। গণিত উৎসবের নিবন্ধন শুরু হয় ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। শীতের হালকা আমেজের সাথে থাকে গণিতের আনাগোনা । শুরুর দিকে গণিত অলিম্পিয়াড আঞ্চলিক এবং জাতীয়, এই দুই পর্বে আয়োজন করা হত। গত ২-৩ বছর ধরে আঞ্চলিকের আগে আরও একটি পর্ব হয়, সেটা হলো বাছাই পর্ব।
ইতোমধ্যে এ বছরের অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। বাছাই পর্বের নিবন্ধন শুরু হয়েছে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে, চলবে ২৩ তারিখ পর্যন্ত। নিবন্ধন লিঙ্ক: registration.math-olympiad। যেহেতু পুরো ব্যাপারটি অনলাইনেই চলমান, নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নতুন করে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকবে না। গণিত উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা হল কোন একটি প্রতিষ্ঠানে ৩য়-১২শ শ্রেণির শিক্ষার্থী হতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরাও কিন্তু অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাইটের FAQ পেইজটি দেখা যাতে পারে। আরও কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য support@matholympiad.org.bd ঠিকানায় ইমেইল করা যেতে পারে।
অলিম্পিয়াডে নিবন্ধনের পর শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের প্রথম যে জিজ্ঞাসা থাকে সেটা হলো, অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো কেমন হয়? কোথা থেকে আসে? এগুলো কি একাডেমিক বইয়ে পাওয়া যায়? নাকি আলাদা করে বই কিনতে হয়? মূলত, গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক টিম পুরো পরীক্ষার একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে। প্রশ্নগুলো যেহেতু ক্যাটাগরি ভিত্তিক হয়, এজন্য সাধারণত বাছাই/আঞ্চলিকের প্রশ্ন একাডেমিক সিলেবাসের সাথে সমন্বয় করে দেয়া হয়। ওয়েবসাইটে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখলে ব্যাপারটা সহজে বোঝা যাবে। যে কোন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থীর কী ধরনের সমস্যার সমাধান জানা উচিত, সেটা মাথায় রেখেই প্রশ্ন করা হয়। কোন শিক্ষার্থী যদি প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে থাকে, তাহলে প্রস্তুতি হিসেবে যে ক্যাটাগরিতে সে অংশগ্রহণ করবে, সে ক্যাটাগরির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে। তাহলে প্রশ্নের ভাষা, কাঠিন্য, সমাধানের সম্ভাব্য উপায় ইত্যাদি বিষয়ের উপর একটা ধারণা হয়ে যাবে। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে যেতে হবে: https://matholympiad.org.bd/resources/all-questions
মোটা দাগে বলা যায় যে, প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- মূলত এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। বিশেষত, প্রাইমারি ও জুনিয়র ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিজ নিজ শ্রেণির বইয়ের ধারণাগুলো ভালোভাবে থাকা উচিত। পাশাপাশি, নিজ ক্যাটাগরির অন্য যে শ্রেণি গুলো রয়েছে, সেই শ্রেণির গণিত বইয়ের ধারণা নিয়ে রাখা উত্তম। অনেকের জিজ্ঞাসা থাকে যে, কয়টা প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিলে বিজয়ী হওয়া যায়। আসলে এটার কোনো সোজাসুজি উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে কোন অঞ্চলের পরীক্ষা, ঐ অঞ্চলের প্রশ্নের ধরণ, এবং সেখানের সকল প্রতিযোগীর পারফরম্যান্স এর উপর। তবে, বাছাই এবং আঞ্চলিক পর্বের ক্ষেত্রে যে ধরণের প্রশ্ন হয়, সেখানে প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর সমান থাকে। এবং, সাধারণত প্রশ্নগুলো কাঠিন্য অনুসারে সহজ থেকে কঠিন এই ক্রমে থাকে। এজন্য, একজন প্রতিযোগী যত বেশি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে, তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা তত বেড়ে যাবে।
গণিত অলিম্পিয়াড সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের আপডেটের জন্য গণিত অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেইজ (https://facebook.com/BdMOC), এবং ফেসবুক গ্রুপ ( https://facebook.com/groups/BdMOC) দেখা যেতে পারে।এছাড়া বাংলার ম্যাথের ওয়েবসাইটেও নিয়মিত আপডেট থাকবে। পরবর্তী ব্লগে আমরা প্রাথমিক ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি হয়নি এমন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গণিত বিষয়ক একটি প্রতিযোগিতা। তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। দৈনিক প্রথম আলো এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এর আয়োজন করে থাকে। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, এটাকে কেন উৎসব বলা হয়, কেন পরীক্ষা বা প্রতিযোগিতা বলা হয় না? আসলে গণিত অলিম্পিয়াডে সারা দিনব্যাপী আয়োজনের একটা ক্ষুদ্র অংশ থাকে পরীক্ষা নিয়ে, বাকি পুরোটা সময় জুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মেতে থাকেন গণিতের আনন্দে।
গণিত উৎসবে তৃতীয় -দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মোট চারটি ক্যাটাগরি বা দলে ভাগ করা হয়। এগুলো হল:
প্রাইমারি
তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৩ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৫।
জুনিয়র
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৬ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৮।
সেকেন্ডারি
নবম, দশম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং ও–লেভেল এবং ও–লেভেল পরীক্ষার্থী।
হায়ার সেকেন্ডারি
একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং এ–লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষার্থী।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড সাধারণত তিনটি পর্বে সম্পন্ন হয়ে থাকে। প্রথমে, বিডিএমও ওয়েবসাইটে যেয়ে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীরাই বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারে। বাছাই পর্ব সাধারণত সরাসরি বা অফলাইনে আয়োজন করা হয়। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সাল থেকে বাছাই পর্ব অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে। ১ ঘন্টাব্যাপী বাছাই পর্বে সাধারণত ৭-১০ টি প্রশ্ন থাকে। পরবর্তীতে, বাছাই পর্বে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারে। আঞ্চলিক পর্ব সাধারণত বিভাগীয় শহর এবং অন্যান্য কিছু জেলাতে আয়োজন করা হয়ে থাকে। অলিম্পিয়াডের এ পর্যায়ে এসে এটি একটি চিত্তাকর্ষক উৎসবে পরিণত হয়, থাকে দিনব্যাপী গণিতের নানা আয়োজন। করোনাকালীন সময়ে আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড অনলাইনে আয়োজন করা হয়েছিলো। ১.১৫ ঘন্টাব্যাপী আঞ্চলিক পর্বের পরীক্ষাতে সাধারণত ৯-১২টি প্রশ্ন থাকে। সবশেষে, আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরা জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। জাতীয় পর্ব সাধারণত দুই দিন ব্যাপী হয়ে থাকে। প্রথম দিনের সকালে পরীক্ষা থাকে, দুপুর থেকে শুরু হয় গণিত নিয়ে নানা জমজমাট আয়োজন। দ্বিতীয় দিনেও থাকে গণিতের নানা আয়োজন। এরপর, পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। এই পর্বে সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে ৬০ থেকে ৮০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এখানে, পরীক্ষার সময়সীমা ক্যাটাগরি অনুসারে ভিন্ন হয়। যেমন:
প্রাইমারি
২ ঘন্টা
জুনিয়র
৩ ঘন্টা
সেকেন্ডারি এবং হায়ার সেকেন্ডারি
৪ ঘন্টা
জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ৭-১৪ দিনের জাতীয় গণিত ক্যাম্প। গণিত ক্যাম্পে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সেশন থাকে এবং শেষ দিকে থাকে মূল্যায়ন পরীক্ষা। এরপর, এখান থেকেই কয়েকজনকে বাছাই করে আয়োজন করা হয় এক্সটেনশন ক্যাম্প এবং টিম সিলেকশন ক্যাম্প। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশ গণিত দল যারা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
এছাড়া, প্রতিবছর এশিয়া প্যাসিফিক ম্যাথ অলিম্পিয়াড (APMO), ইরানিয়ার জিওমেট্রি অলিম্পিয়াড (IGO), ইরানিয়ান কম্পিনেটরিক্স অলিম্পিয়াড (ICO), ইউরোপিয়ার গার্লস ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড (EGMO) সহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির মনোনীত বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করে থাকে।
গণিত উৎসবের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে পাঠানো এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের বুদ্ধিভিত্তিক মর্যাদা সমুন্নত করা। তবে মূল লক্ষ্য হলো, আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে যে গণিতভীতি বিদ্যমান সেটি দূর করা এবং গণিতের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে দেখা। সর্বোপরি, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতার উন্নয়ন করে তাদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করে তোলা।