গণিত অলিম্পিয়াডের আদ্যোপান্ত – জুনিয়র ক্যাটাগরির প্রস্তুতি

পর্ব ৪: জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ভালো করার উপায়

জুনিয়র ক্যাটাগরি বলতে আসলে ষষ্ঠ থেকে অষ্ঠম শ্রেণির এর মধ্যে অন্তর্গত শিক্ষার্থীদের বুঝায়। এই ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরা প্রথম বারের মত ষষ্ঠ শ্রেণি গণিতের অনেক মজার বিষয়ের সাথে পরিচিতি লাভ করে। যেমন: বীজগণিত, জ্যামিতির উপপাদ্য,পরিমিতি  ইত্যাদি। এজন্য, অনেক শিক্ষার্থীরা কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে এসব বিষয়ে ভালো ধারণা লাভ করবে। জ্যামিতির উপপাদ্যের ক্ষেত্রে কোনো কিছু প্রমাণ করা যুক্তির মত কাজ করে; আমরা পূর্ববর্তী কিছু উপপাদ্য দিয়ে নতুন কোনো উপপাদ্য প্রমাণ করি কিংবা নতুন কোনো জ্যামিতিক সমস্যা সমাধান করে থাকি।

আমরা ইতোমধ্যে আগের লিখাগুলোতে বলেছি যে, অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- মূলত এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। প্রাথমিক ক্যাটাগরিতে তুলনায় জুনিয়র ক্যাটগরিতে বীজগণিত সম্পর্কিত বেশী সমস্যা দেখা যায়। আগের বারের মত এবারো জুনিয়র ক্যাটাগরির জন্য আমরা কিছু সমস্যা ও তার সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।

সংখ্যাতত্ত্ব: সংখ্যার বেলার বিভিন্ন ধরণের সংখ্যা  যেমন মৌলিক সংখ্যা , যৌগিক সংখ্যা কিংবা বিভাজ্যতা বা ভাগশেষ এই বিষয়গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ন। এরপর গড়, ঐকিক নিয়ম ,শতকরা, লাভ ক্ষতি এই ধরণের গাণিতিক ধারণা থেকেও সমস্যা দেখা যায়। এছাড়া প্যাটার্ন এবং সিরিজ এর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন নিচের এই সমস্যাটি দেখা যাক-

(𝟕×𝟕×𝟕×⋯×𝟕). Here, there are 𝟕 for 𝟐𝟏 times. What will be the remainder if the product is divided by 𝟏𝟎?এখানে, 21 বারের জন্য 7 কে 21 বার গুণ করা হয়েছে আছে। যদি গুণফলটিকে 10 দ্বারা ভাগ করা হয় তাহলে ভাগশেষ কত থাকবে?


এই সমস্যা সমাধানের অনেক উপায় বা টেকনিক রয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াডে অনেকের যে ব্যাপার নতুন করে জেনে থাকে সেটা হলো Modular arithmatic বা mod। তবে আমরা এখানে আলোচনা করবো কিভাবে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো সমস্যাকে ক্ষুদ্র আকারে চিন্তা করতে পারে এবং সমস্যার ভিতরে বিভিন্ন প্যাটার্ন খুঁজে পেতে পারে। যেমন কয়েকটা উদাহরণ দেখি আমরা-জুনিয়র ক্যাটাগরি ছবি ০২

এখানে আমরা 7 এর সূচক এর প্রথম 12 টার মান উল্লেখ করেছি। আচ্ছা, এই বিশাল সংখ্যার মধ্যে কি কোনো প্যাটার্ন বা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়? আচ্ছা, কেনই বা আমরা চারটি চারটি করে আলাদা লিখলাম সংখ্যাগুলোকে? তোমরা কি কিছু বুঝতে পেরেছো? চিন্তা করে দেখো তো!

আচ্ছা, বিভাজ্যতা নিয়ে এই সমস্যাটি দেখা যাক-

𝟑 _ _ 𝟕𝟒 একটি পাঁচ অংকের সংখ্যা যা কিনা 99 দ্বারা বিভাজ্য। তাহলে সংখ্যাটি কত?
𝟑 _ _ 𝟕𝟒  is a five-digit number divisible by 𝟗𝟗. What is the number?

একটু খেয়াল করো যে, 11 দ্বারা বিভাজ্য এবং 9 দ্বারা যদি বিভাজ্য হয় তাহলেই কিন্তু সংখ্যাটি 99 দ্বারা বিভাজ্য হবে। আবার, 9 দ্বারা বিভাজ্য হওয়ার শর্ত হলো, সংখ্যাটির অংকগুলোর যোগফল 9 দ্বারা বিভাজ্য হতে হবে।
আচ্ছা, ধরে নিই যে, সংখ্যাটি 3xy74
তাহলে, 9 দ্বারা বিভাজ্য হতে হলে আমরা বলতে পারি 3 + x + y + 7 + 4 এর মান 9 এর গুনিতক হতে হবে।
এখন, 9 এর গুণিতক হলো 9, 18, 27, 36…..
তাহলে, 14 + x + y = 18 বা 27 হতে পারে কিন্তু 36 বা তার বেশি হতে পারবে না!
আবার, 11 দ্বারা বিভজ্য হওয়ার জন্য 3 + y + 4 – (x + 7) = 0 অথবা 11 হবে।
এখান থেকে পাবো, y – x = 0 অথবা 11 
তাহলে, y = x বা y = x + 11
এখান থেকে কিন্তু সহজেই yএর মান বের করে ফেলা যাবে। তাই না? ঝটফট বের করে ফেলো তাহলে।

 
বীজগণিত: বীজগণিতের ক্ষেত্রে দ্বিঘাত সমীকরণ, সহসমীকরণ, উৎপাদকে বিশ্লেষণ বিভিন্ন বীজগাণিতিক রাশির মান নির্ণয় ইত্যাদি টপিকে ভালো ধারণা রাখতে হয়।  একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক-

জুনিয়র ক্যাটাগরি- বীজগণিতের ছবিএখান থেকে ধারণা নিয়ে তোমরা তাহলে সমস্যাটি সমাধান করে ফেলো। 

গণনার ক্ষেত্রে বিন্যাস ও সমাবেশের (Permutation and Combination) প্রাথমিক ধারণা, গণনার যোগজ ও গুণন বিধি যেমন: কতভাবে সাজানো যাবে, কিভাবে সাজানো যাবে এই ধরণের সমস্যা সমাধানের উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এছাড়া, পায়রা খোপ নীতি (Pigeonhole Principle) বিষয়টিও বেশ মজার। যেমন আমরা নিচের সমস্যটি দেখি-

E বর্ণটি GEBON শব্দটি থেকে বাদ দিয়ে দেয়া হলো। বাকি বর্ণগুলি কতগুলি উপায় বিন্যস্ত করা যেতে পারে যাতে O বর্ণটি শুরুতে না থাকে?
The letter E is thrown away from the word GEBON. How many ways can the rest of the letters be jumbled so that O does not appear at the beginning?

 

এই সমস্যাটিতে মূলত চার বর্ণের একটি শব্দকে কতভাবে সাজানো যেতে পারে সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। 4 টি ভিন্ন ভিন্ন বর্ণ সাজানো যায় 4! উপায়ে।  4! এর মানে হলো 4 × 3 × 2 × 1
এখন, এই 24 উপায়ের মধ্যে কিছু শব্দ থাকবে যাদের সামনে O বর্নটি থাকবে, সবগুলোতে কিন্তু থাকবে না। আচ্ছা, তোমরা কি এটার উত্তর বের করতে পারবে?

জ্যামিতি: জ্যামিতির জন্য ষষ্ঠ থেকে অষ্ঠম শ্রেণির বইয়ের জ্যামিতির অংশটুকু ভালোমত জানা থাকতে হবে। বিভিন্ন ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্তের ক্ষেত্রফল, কোণ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর ভালো ধারণা থাকা লাগবে। বিশেষ করে, ত্রিভুজের সর্বসমতা এবং সদৃশতা জানা থাকলে অনেক সমস্যা সমাধানের সহজ হয়ে যায়। আর, পীথাগোরাসের উপপাদ্যটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
যেমনপীথাগোরাসের উপপাদ্যের ব্যবহার দিয়ে নিচের সমস্যাটি সমাধান করা যায়-

নিচের চিত্রের সব ত্রিভুজগুলি সমকোণী ত্রিভুজ এবং AB = AC = CD = DE = EF = 1 হয়, তাহলে BF এর মান কত হবে?If all the triangles in the figure are right-angled triangles and AB = CD = DE = EF = 1 , what will be the value of BF?

জুনিয়র ক্যাটাগরি- জ্যামিতি ছবি

যে কোনো সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে আমরা জানি, অতিভূজ2 = লম্ব2 + ভূমি2
পাশের ছবি অনুসারে কিন্তু আমরা বলতে পারি, CB2 = AC2 + AB2 

এইখান থেকে কিন্তু আমরা CB এর মান যে √2  সেটি খুব সহজেই বলতে পারি। একইভাবে কিন্তু
BD, BE এবং BF এর মান বের করা যায়। ঝটপট তাহলে বের করে ফেলো।

আশা করছি, এই লিখা থেকে জুনিয়র ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। আসলে অলিম্পিয়াডে ভালো করতে হলে বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। আমাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক সমস্যা বিভাগে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয়, কেউ চাইলে এগুলো নিয়মিত সমাধান করতে পারে। 

পরবর্তী লিখাতে আমরা সেকেন্ডারি ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। সে পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের সাথে থাকুন, গণিতের সাথে থাকুন।

(গণিত অলিম্পিয়াড সিরিজের পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন,  পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

 

গণিত অলিম্পিয়াডের আদ্যোপান্ত – প্রাইমারি ক্যাটাগরির প্রস্তুতি

পর্ব ৩: প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ভালো করার উপায়

গণিত উৎসবে প্রাইমারি ক্যাটাগরি বলতে আসলে তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বুঝায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকেরা যে প্রশ্নগুলো করে থাকে সেগুলো এরকম: 
আমি তৃতীয় বা পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছি, প্রথমবারের মত গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করবো-

  • কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারি?
  • কোন বই পড়লে ভালো হবে?
  • কবে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবো?

আমরা ইতোমধ্যে বলেছি যে, মোটাদাগে অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। কয়েকটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলে ব্যাপারটা বোঝা সহজ হবে। আজকের লিখা মূলত প্রাথমিক ক্যাটাগরির কিছু সমস্যা সমাধান ও প্রস্তুতি নিয়ে।

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠ্যবই থেকে সংখ্যার স্থানীয় মান, সংখ্যার বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া (যেমন: যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) এসব সম্পর্কে জানতে পারে। এরপর, ধাপে ধাপে তারা গড়, ঐকিক নিয়ম, শতকরা, লাভ- ক্ষতি নিয়ে ধারণা লাভ করে যা মূলত সংখ্যার বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। গণিত অলিম্পিয়াডে সংখ্যা সংক্রান্ত অনেক ধরণের সমস্যা থাকে যেমন: উৎপাদক, লসাগু, গসাগু, জোড়, বিজোড়, বিভাজ্যতা ইত্যাদি। উদাহরণ হিসেবে নিচের এই সমস্যাটি দেখা যাক-

“ফুয়াদের কাছে কিছু আপেল আপেল রয়েছে, 100 টিরও বেশি নয়, 10 টিরও কম নয়। যদি সে একটি  আপেল সরিয়ে নেয়, তাহলে অবশিষ্ট আপেল দুইজনের মাঝে সমানভাবে ভাগ করা যেতে পারে। আবার, যদি সে আরেকটি আপেল যোগ করে, তাহলে আপেলগুলো তিনজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা যেতে পারে। ফুয়াদের কাছে থাকা আপেলের সম্ভাব্য পরিমাণ কত ভিন্ন রকমের হতে পারে?”

এখানে প্রশ্ন দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, ফুয়াদের কাছে অবশ্যই বিজোড় সংখ্যক আপেল আছে! কারণ একটি আপেল সরিয়ে রাখার পর অবশিষ্ট আপেল দুই জনের মাঝে সমান ভাবে ভাগ করে দেয়া সম্ভব হয়, শুরুতে জোড় সংখ্যক আপেল থাকলে এটি সম্ভব হতো না। কাজেই, এ তথ্য অনুযায়ী উত্তর হতে পারে 11, 13, 15 ইত্যাদি। আবার, যে পরিমাণ আপেল আছে, তার সাথে আরেকটি আপেল যোগ করলে সেগুলো তিন জনকে সমান ভাগে ভাগ করে দেয়া যাবে। অর্থাৎ, ফুয়াদের কাছে যে পরিমাণ আপেল আছে তার সাথে আরেকটি আপেল যোগ করলে তা তিন দ্বারা বিভাজ্য বা তিনের গুণিতক সংখ্যা হবে! তিনের গুণিতক সংখ্যাগুলো আমরা জানি- 12, 15, 18, 21… এসব। এই দুই তথ্য থেকে আমরা কিন্তু সহজেই সমস্যাটি সমাধান করতে পারি।

আরেকটি সমস্যা নিয়ে আমরা ভেবে দেখতে পারি-
একটি ক্লাসে এমন সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে যে, তারা 5 টি বেঞ্চেও বসলেও প্রতি বেঞ্চে সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী বসতে পারে। আবার, 8 টি বেঞ্চে বসলেও প্রতি বেঞ্চে সমান সংখ্যক শিক্ষার্থী বসতে পারে। ঐ ক্লাসে কমপক্ষে কতজন শিক্ষার্থী আছে?”

এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আমরা যদি 5 এর গুণিতক এবং 8 এর গুণিতকের একটি তালিকা করি, তাহলেই বুঝতে পারবো উত্তর কেমন হতে পারে। (সঠিক উত্তর বের করার দায়িত্ব পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম!) 

অলিম্পিয়াডের কিছু সমস্যা আছে যেগুলো একটু ব্যতিক্রম, পড়ে তৎক্ষণাৎ বোঝা যায় না কিভাবে সমস্যাটি সমাধান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটা ভালো বুদ্ধি হলো উল্টো পথে হাঁটা বা ব্যাকট্রাকিং! অনেক কঠিন একটা শব্দ ব্যবহার করে ফেললাম! ব্যাপারটা আসলে এতো কঠিন না, নিচের সমস্যাটি দেখলেই বোঝা যাবে-

“তুমি 2 সংখ্যাটা দিয়ে শুরু কর। প্রতি ধাপে হয় তুমি তোমার কাছে থাকা সংখ্যাটার সাথে এক যোগ করতে
পারো অথবা তিন গুণ করতে পারো। তুমি 31 সংখ্যাটাতে যেতে চাও। সর্বনিম্ন কয়টা ধাপে তুমি এই কাজটা করতে পারবে?”

প্রাইমারি ক্যাটাগরি ছবি-০২ ছবি: ২ থেকে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার বিভিন্ন উপায়

এখানে, প্রশ্ন অনুযায়ী 2 থেকে শুরু করলে কিন্তু 3 কিংবা 6 এই দুইটাতে যাওয়া সম্ভব। এভাবে চিন্তা করলে অনেক গুলো সংখ্যাতে যাওয়া যায়। আরেকভাবেও কিন্তু চিন্তা করা যেতে পারে; আমরা শুরু করবো 31 থেকে, প্রতি ধাপে 1 বিয়োগ কিংবা 3 দিয়ে ভাগ করার চেষ্টা করে 2 সংখ্যাটি পাওয়ার চেষ্টা করবো, এভাবে উত্তরে পৌঁছানো
সম্ভব হবে। (সঠিক উত্তর তাহলে কত হবে? এটাও পাঠকের হাতে ছেড়ে দিলাম!) 

প্রাইমারি ক্যাটাগরি ছবি ০৩ছবি: ব্যাকট্র্যাকিং করে ৩১ থেকে ২ এ পৌঁছানোর উপায়


আশা করছি, এই লিখা থেকে প্রাথমিক ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে একটা ভালো ধারণা পাওয়া গেছে। আসলে অলিম্পিয়াডে ভালো করতে হলে বেশি বেশি সমস্যা সমাধানের কোন বিকল্প নেই। আমাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক সমস্যা বিভাগে বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা দেয়া হয়, কেউ চাইলে এগুলো নিয়মিত সমাধান করতে পারে। 

পরবর্তী লিখাতে আমরা জুনিয়র ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে লিখবো। সে পর্যন্ত বাংলার ম্যাথের সাথে থাকুন, গণিতের সাথে থাকুন।

(গণিত অলিম্পিয়াড সিরিজের পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন,  পর্ব-২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৬ এর সমাধান (Problem Weekly–06 with Solution)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৬: সংখ্যাভাবুক সৌভিক তার স্কুলের ফুটবল টিমে খেলার সুযোগ পেয়েছে। সামনেই একটা টুর্নামেন্ট আছে। টুর্নামেন্টের আগে আগে চাপ মুক্ত থাকার জন্য সৌভিক তার দলের সবাইকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে গেলো। মেলাতে বিভিন্ন ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল; ছিল নাগরদোলায় চড়ার ব্যবস্থা, ছিল সার্কাস, পুতুল নাচ ইত্যাদি।দলের সবাই মিলে ঠিক করলো নাগরদোলায় উঠবে। সবাই নাগরদোলায় চড়ে বসলো আর সৌভিক ছবি তোলার জন্য নিচে থেকে গেলো।  কিছু ছবি তোলার পর সৌভিক দেখতে লাগলো ছবিগুলো কেমন হয়ছে। দেখার পর মনে মনে বললো , ছবি তো সুন্দরভাবেই উঠেছে!  কিচ্ছুক্ষণ পর সৌভিক খেয়াল করলো যে, নাগরদোলায় ১০ জন যেভাবে বসেছে ,তাদের মধ্যে সুন্দর একটা গাণিতিক মিল আছে। পাশাপাশি বসা দুইজন খেলোয়াড়ের জার্সির নম্বরের বর্গের যোগফল, তাদের ঠিক বিপরীতে যে দুইজন খেলোয়াড় বসেছে, তাদের জার্সির নম্বরের বর্গের যোগফলের সমান!
এখানে, ছবিতে চার জনের জার্সি নম্বর দেয়া আছে। তোমরা কি বলতে পারবে যে ,বাকি ছয় জন খেলোয়াড়ের জার্সি নম্বরের যোগফল কত হবে?

Problem Weekly-06: Number-lover Souvik has got a chance on his school team to play football. There’s a tournament ahead. Before the tournament, Souvik and his team went to the fair together to stay stress-free. There were various types of entertainment at the fair; there were arrangements for climbing in Nagardola, there were circuses, puppet-show, etc. The team decided to ride on the mighty “Nagordola”. Leaving Souvik, the rest of the team sat on Nagardola and gave Souvik the responsibility of taking pictures of them. So after taking the pictures, Souvik checked the quality of the pictures and said to himself, “The pictures are beautifully taken.” After some moment, Souvik somehow noticed that there was a beautiful mathematical similarity between the 10 players sitting in Nagardola. That is, the sum of the squares of the jersey number of two players is equal to the sum of the squares of the jersey number of two players who sit opposite them.
In the picture below, the jersey number of four players is given. Can you say what will be the sum of the jersey number of the remaining six?

সমাধান: ধরি, বাকি ছয় জনের জার্সির নম্বর যথাক্রমে a, b, c, d, e, এবং f
তাহলে, প্রশ্নের তথ্যানুসারে,
a2 + b2 = f2 + e2     ……..(i)
b2 + c2 =  e2
+ d2   ……..(ii)
c2+ 82 = d2 + 2……..(iii)
142 + f2 = 162 + a2 ………(iv)

problem weekly 06

(i) নং সমীকরণ হতে পাই,
b– e2 = f2 – a2

(ii) নং সমীকরণ হতে পাই,
b– e2 = d2 – c

(iii) নং সমীকরণ হতে পাই,
d– c2 = 82 – 22
বা, d– c2 = 60 

এখান থেকে সমীকরণ সমন্বয় করে আমরা বলতে পারি যে, 
b– e2 = f2 – a2 = d– c2 = 60
বা, (b + e) (b – e) = (f + a) (f – a) =
(d + c) (d – c) = 60

এখন, আমাদের 60 এর উৎপাদকগুলো খুঁজে বের করতে হবে। 60 এর উৎপাদকগুলো হল:

60 = 1 × 60
     = 2 × 30
     = 3 × 20
    = 4 × 15
   = 5× 12
    = 6 × 10 

এখন, 60 কে আমাদের দুইটি রাশির গুণফল আকারে প্রকাশ করতে হবে। যেমন:
(b + e) (b – e) = 60
এক্ষেত্রে, দুইটি রাশির প্রত্যেকটি সংখ্যা অবশ্যই জোড় অথবা বিজোড় হতে হবে। কোন একটি রাশির একটি সংখ্যা জোড় এবং অপরটি বিজোড় হতে পারবে না যেহেতু গুণফল একটি জোড় সংখ্যা!

কাজেই, আমরা বলতে পারি, 
(b + e) (b – e) = 6 × 10  এবং 
(b + e) (b – e) = 2 × 30 
এই দুটোই সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে।
সুতরাং, আমাদের সমাধান অনুসারে 
(b, e) = (8,2) অথবা (16, 14) হবে।
একইভাবে, 
(f, a) = (8,2) বা (16, 14)  
(d, c) = (8,2) বা (16, 14)

তাহলে, বাকি ছয়জনের জার্সি নম্বরের যোগফল হতে পারে 30 কিংবা 50 কিংবা 70 কিংবা 90
কিভাবে আমরা এটা বলতে পারলাম?
নিচে দুইটি উদাহরণ দেখানো হল:
যখন a = 2, b = 8, c = 2, d = 8, e = 2, f = 8 হবে, তখন যোগফল হবে 30

problem weekly 06

আবার, যখন a = 2, b = 16, c = 2, d = 8, e = 14, f = 8 হবে, তখন যোগফল হবে 50

problem weekly 06

এভাবে ভিন্ন ভিন্ন মান ধরে বাকি যোগফলগুলোও দেখানো যাবে। বুঝা যাচ্ছে, আমাদের এই সপ্তাহের সমস্যার
বেশ কয়েকটি সমাধান আছে।

অনেকেই আমাদের কাছে এই সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন। তবে, সম্পূর্ণ সমাধান কেউ করতে পারেন নি। বেশিরভাগ সমাধানে আংশিক উত্তর এসেছে, এজন্য, সাপ্তাহিক সমস্যা-০৬ এ  কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে না! 

যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
(আমাদের অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।) 

গণিত অলিম্পিয়াডের আদ্যোপান্ত – নিবন্ধন প্রক্রিয়া

পর্ব ২: অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও প্রশ্নাবলি

বর্তমানে আমাদের দেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক ধরণের অলিম্পিয়াড হয়ে থাকে। এজন্য, কখন কবে কোথায় অলিম্পিয়াড হয়ে গেলো সেটা বোঝা দায়। আবার দেখা যায়, একই দিনে একাধিক অলিম্পিয়াডের আয়োজন থাকে। অলিম্পিয়াড শেষে অনেকে ফোন/মেসেজ দিয়ে জানায় যে, তারা জানতোই না অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ, পরীক্ষাও হয়ে গিয়েছে! কি একটা অবস্থা! 

যাই হোক, আমরা গণিত অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন নিয়ে কথা বলি। গণিত উৎসবের নিবন্ধন শুরু হয় ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। শীতের হালকা আমেজের সাথে থাকে গণিতের আনাগোনা । শুরুর দিকে গণিত অলিম্পিয়াড আঞ্চলিক এবং জাতীয়, এই দুই পর্বে আয়োজন করা হত। গত ২-৩ বছর ধরে আঞ্চলিকের আগে আরও একটি
পর্ব হয়, সেটা হলো বাছাই পর্ব। 

ইতোমধ্যে এ বছরের অলিম্পিয়াডের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। বাছাই পর্বের নিবন্ধন শুরু হয়েছে গত ৬ ডিসেম্বর থেকে, চলবে ২৩ তারিখ পর্যন্ত। নিবন্ধন লিঙ্ক: registration.math-olympiad
যেহেতু পুরো ব্যাপারটি অনলাইনেই চলমান, নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর নতুন করে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকবে না। গণিত উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা হল কোন একটি প্রতিষ্ঠানে ৩য়-১২শ শ্রেণির শিক্ষার্থী হতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো, চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরাও কিন্তু অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত কোনো সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাইটের
FAQ পেইজটি দেখা যাতে পারে। আরও কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য support@matholympiad.org.bd  ঠিকানায় ইমেইল করা যেতে পারে।

 

অলিম্পিয়াডে নিবন্ধনের পর শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের প্রথম যে জিজ্ঞাসা থাকে সেটা হলো, অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো কেমন হয়? কোথা থেকে আসে? এগুলো কি একাডেমিক বইয়ে পাওয়া যায়? নাকি আলাদা করে বই কিনতে হয়? মূলত, গণিত অলিম্পিয়াডের একাডেমিক টিম পুরো পরীক্ষার একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে। প্রশ্নগুলো যেহেতু ক্যাটাগরি ভিত্তিক হয়, এজন্য সাধারণত বাছাই/আঞ্চলিকের প্রশ্ন একাডেমিক সিলেবাসের সাথে সমন্বয় করে দেয়া হয়। ওয়েবসাইটে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখলে ব্যাপারটা সহজে বোঝা যাবে। যে কোন ক্যাটাগরিতে অংশগ্রহণকারী একজন শিক্ষার্থীর কী ধরনের সমস্যার সমাধান জানা উচিত, সেটা মাথায় রেখেই প্রশ্ন করা হয়। কোন শিক্ষার্থী যদি প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করে থাকে, তাহলে প্রস্তুতি হিসেবে যে ক্যাটাগরিতে সে অংশগ্রহণ করবে, সে ক্যাটাগরির বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখতে হবে। তাহলে প্রশ্নের ভাষা, কাঠিন্য, সমাধানের সম্ভাব্য উপায় ইত্যাদি বিষয়ের উপর একটা ধারণা হয়ে যাবে।  বিগত বছরের প্রশ্ন দেখতে চাইলে এই লিঙ্কে যেতে হবে:  https://matholympiad.org.bd/resources/all-questions

মোটা দাগে বলা যায় যে, প্রশ্নগুলো সংখ্যাতত্ত্ব, গণনা, বীজগণিত, জ্যামিতি, যুক্তি- মূলত এই পাঁচটি বিষয় থেকেই হয়ে থাকে। বিশেষত, প্রাইমারি ও জুনিয়র ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিজ নিজ শ্রেণির বইয়ের ধারণাগুলো ভালোভাবে থাকা উচিত। পাশাপাশি, নিজ ক্যাটাগরির অন্য যে শ্রেণি গুলো রয়েছে, সেই শ্রেণির গণিত বইয়ের ধারণা নিয়ে রাখা উত্তম। অনেকের জিজ্ঞাসা থাকে যে, কয়টা প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিলে বিজয়ী হওয়া যায়। আসলে এটার কোনো সোজাসুজি উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে কোন অঞ্চলের পরীক্ষা, ঐ অঞ্চলের প্রশ্নের ধরণ, এবং সেখানের সকল প্রতিযোগীর পারফরম্যান্স এর উপর। তবে, বাছাই এবং আঞ্চলিক পর্বের ক্ষেত্রে যে ধরণের প্রশ্ন হয়, সেখানে প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর সমান থাকে। এবং, সাধারণত প্রশ্নগুলো কাঠিন্য অনুসারে সহজ থেকে কঠিন এই ক্রমে থাকে। এজন্য, একজন প্রতিযোগী যত বেশি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে, তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা তত বেড়ে যাবে।

গণিত অলিম্পিয়াড সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের আপডেটের জন্য গণিত অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেইজ (https://facebook.com/BdMOC), এবং ফেসবুক গ্রুপ https://facebook.com/groups/BdMOC) দেখা যেতে পারে।এছাড়া বাংলার ম্যাথের ওয়েবসাইটেও নিয়মিত আপডেট থাকবে। পরবর্তী ব্লগে আমরা প্রাথমিক ক্যাটাগরির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবো।

(গণিত অলিম্পিয়াড সিরিজের পর্ব-১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।)

 

গণিত অলিম্পিয়াডের আদ্যোপান্ত- শুরুর কথা

পর্ব ১: গণিত অলিম্পিয়াডের সূচনা

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো ভর্তি হয়নি এমন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য গণিত বিষয়ক একটি প্রতিযোগিতা। তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। দৈনিক প্রথম আলো এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এর আয়োজন করে থাকে। ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড আয়োজিত হয়। তখন থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, এটাকে কেন উৎসব বলা হয়, কেন পরীক্ষা বা প্রতিযোগিতা বলা হয় না? আসলে গণিত অলিম্পিয়াডে সারা দিনব্যাপী আয়োজনের একটা ক্ষুদ্র অংশ থাকে পরীক্ষা নিয়ে, বাকি পুরোটা সময় জুড়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মেতে থাকেন গণিতের আনন্দে।

গণিত উৎসবে তৃতীয় -দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মোট চারটি ক্যাটাগরি বা দলে ভাগ করা হয়। এগুলো হল:

প্রাইমারি তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৩ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৫।
জুনিয়র ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি বা সমমান এবং স্ট্যান্ডার্ড-৬ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৮।
সেকেন্ডারি নবম, দশম শ্রেণি ও এসএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং ও–লেভেল এবং ও–লেভেল পরীক্ষার্থী।
হায়ার সেকেন্ডারি একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী বা সমমান এবং এ–লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষার্থী। 

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড সাধারণত তিনটি পর্বে সম্পন্ন হয়ে থাকে।  
প্রথমে, বিডিএমও ওয়েবসাইটে যেয়ে নিবন্ধন করতে হয়। নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীরাই বাছাই পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারে। বাছাই পর্ব সাধারণত সরাসরি বা অফলাইনে আয়োজন করা হয়। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সাল থেকে বাছাই পর্ব অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে। ১ ঘন্টাব্যাপী বাছাই পর্বে সাধারণত ৭-১০ টি প্রশ্ন থাকে। 
পরবর্তীতে, বাছাই পর্বে বিজয়ী শিক্ষার্থীরা আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণ করতে পারে। আঞ্চলিক পর্ব সাধারণত বিভাগীয় শহর এবং অন্যান্য কিছু জেলাতে আয়োজন করা হয়ে থাকে। অলিম্পিয়াডের এ পর্যায়ে এসে এটি একটি  চিত্তাকর্ষক উৎসবে পরিণত হয়, থাকে দিনব্যাপী গণিতের নানা আয়োজন। করোনাকালীন সময়ে আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড অনলাইনে আয়োজন করা হয়েছিলো। ১.১৫ ঘন্টাব্যাপী আঞ্চলিক পর্বের পরীক্ষাতে সাধারণত ৯-১২টি প্রশ্ন থাকে।
সবশেষে, আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীরা জাতীয় পর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। জাতীয় পর্ব সাধারণত দুই দিন ব্যাপী হয়ে থাকে। প্রথম দিনের সকালে পরীক্ষা থাকে, দুপুর থেকে শুরু হয় গণিত নিয়ে নানা জমজমাট আয়োজন। দ্বিতীয় দিনেও থাকে গণিতের নানা আয়োজন। এরপর, পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। এই পর্বে সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে ৬০ থেকে ৮০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এখানে, পরীক্ষার সময়সীমা ক্যাটাগরি অনুসারে ভিন্ন হয়। যেমন: 

প্রাইমারি

২ ঘন্টা

জুনিয়র

৩ ঘন্টা

সেকেন্ডারি এবং হায়ার সেকেন্ডারি

৪ ঘন্টা

জাতীয় পর্বের  বিজয়ীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় ৭-১৪ দিনের জাতীয় গণিত ক্যাম্প। গণিত ক্যাম্পে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সেশন থাকে এবং শেষ দিকে থাকে মূল্যায়ন পরীক্ষা। এরপর, এখান থেকেই কয়েকজনকে বাছাই করে আয়োজন করা হয় এক্সটেনশন ক্যাম্প এবং টিম সিলেকশন ক্যাম্প। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত হয় বাংলাদেশ গণিত দল যারা আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

এছাড়া, প্রতিবছর এশিয়া প্যাসিফিক ম্যাথ অলিম্পিয়াড (APMO), ইরানিয়ার জিওমেট্রি অলিম্পিয়াড (IGO), ইরানিয়ান কম্পিনেটরিক্স অলিম্পিয়াড (ICO), ইউরোপিয়ার গার্লস ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড (EGMO) সহ বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির মনোনীত বাংলাদেশ দল অংশগ্রহণ করে থাকে।

গণিত উৎসবের একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে পাঠানো এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের বুদ্ধিভিত্তিক মর্যাদা সমুন্নত করা। তবে মূল লক্ষ্য হলো, আমাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে যে গণিতভীতি বিদ্যমান সেটি দূর করা এবং গণিতের আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে দেখা। সর্বোপরি, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতার উন্নয়ন করে তাদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করে তোলা।

(গণিত অলিম্পিয়াড সিরিজের পর্ব-২ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।)