সাপ্তাহিক সমস্যা-০৪ এর সমাধান (Problem Weekly–04 with Solution)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৪: আমাদের সবার পরিচিত “জ্যামিতিক জামি” আর “সংখ্যাভাবুক সৌমিক” একদিন তাদের কলেজ ক্যান্টিনে বসে গল্প করছে। ওদের কলেজের ক্যান্টিন বেশ আধুনিক। ক্যান্টিনে মোটামুটি সব ধরণের ফার্স্টফুড খাবার এবং কোল্ড ড্রিংক্স পাওয়া যায়। 250 মিলি. এর কাঁচের বোতলের কোল্ড ড্রিংক্স পাওয়া যায় এখানে যেগুলো বাইরে সাধারণত পাওয়া যায় না। কাঁচের বোতলের কোল্ড ড্রিংক্স এর দাম 15 টাকা। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী এটি কিনে ক্যান্টিনের যেখানে সেখানে ফেলে রাখে। এজন্য ক্যান্টিনে নিয়ম করা হয়েছে যে, কোল্ড ড্রিংক্স এর বোতল কিনতে হলে প্রথমে 20 টাকা দিতে হবে, যদিও প্রকৃত দাম কিন্তু 15 টাকা। এবং খাওয়া শেষ করে বোতল জমা দিলে 5 টাকা ফেরত দেয়া হবে!

তো যাই হোক, জামি চিন্তা করেছে আজকে তার সহপাঠীদের 7UP এর একটা বড়সড় ট্রিট দিবে। কিন্তু জামির মানিব্যাগে সর্বসাকুল্যে 2025 টাকা রয়েছে। জামি তার বন্ধু সৌভিকের সাথে এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করলো-

জামি: আমার কাছে তো 2025 টাকা আছে। ট্রিট দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রত্যেকের জন্য যদি 15 টাকা করে খরচ করি, তাহলে আমি আজ 135 জনকে 7UP এর ট্রিট দিতে পারবো।
সৌভিক: আরে না! তুমি তো প্রথমে 135 টা 7UP  কিনতে পারবে না। তোমাকে 101 টা 7UP এর বোতল কিনতে হবে।
জামি: তাই নাকি? আচ্ছা তুমি তাহলে বলো তো, আমি 2025 টাকায় মোট কয়জনকে 7UP এর ট্রিট দিতে পারবো?
সৌভিক: আমি জানি কিন্তু বলবো না। তুমি নিজেই উত্তরটা বের করো! 

আচ্ছা, তোমরা কি বলতে পারবে, জামি সর্বোচ্চ মোট কতজনকে ট্রিট দিতে পারবে?

 Problem Weekly-04: One day our famous duo, “Geo-centric Jami” and “Number-lover Soumik”, are sitting in their college canteen and having chitchat as usual. Their college canteen is a furnished one. Almost all kinds of fast food and cold drinks are available in the canteen. 250ml glass bottles of cold beverages are mainly available here which are not usually available outside. Each of the glass bottles costs Tk15. But many people buy glass bottles and, leave them wherever in the canteen. So, a rule has been set in the canteen: to buy a glass bottle of cold drinks, one has to pay 20tk first, although the actual price is 15tk. And, if anyone finishes drinking and, returns the bottle unharmed, they will pay back 5tk.

Jami, however, has thought of giving his classmates a 7UP treat today. Jami has a total of 2025tk in his wallet. He is talking with Souvik about this matter-
Jami: I have 2025tk in my wallet. If I spend 15tk for everyone, I can give 135 people a 7UP treat today.
Souvik: Not really! You can’t buy 135 bottles at first. Initially, you can buy at most 101 bottles.
Jami: Is that so? Then tell me, how many people can I give a 7up treat to within 2025tk?
Souvik: I know but I will not reveal. Find it by yourself!

Well, can you tell us the highest number of people Jami gives treats to?

 

সমাধান:  প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, জামির কাছে প্রথমে ছিল 2025 টাকা।

যেহেতু একটি 7up কিনতে 20 টাকা লাগে, তাই 2025 টাকা দিয়ে জামি প্রথমবার মোট 7up কিনতে পারবে
= (2025 ÷ 20 ) = 101 টি এবং অবশিষ্ট থাকবে 5 টাকা।

কিন্তু ক্যান্টিনের নিয়মানুসারে, প্রতিটি খালি বোতল জমা দিলে 5 টাকা ফেরত পাওয়া যায়।

তাহলে,  101 টি 7up এর খালি বোতল জমা দিলে জামি ফেরত পাবে =  (101 × 5) = 505 টাকা।

তাহলে, আগের 5 টাকা সহ জামির কাছে বর্তমানে আছে = (505+5) বা 510 টাকা।

এবার, 510 টাকা দিয়ে জামি মোট 7up কিনতে পারবে  = (510 ÷ 20 ) = 25 টি এবং অবশিষ্ট থাকবে 10 টাকা।

একইভাবে, এই 25 টি 7up এর খালি বোতল জমা দিলে জামি ফেরত পাবে  =  (25 × 5) = 125 টাকা।

তাহলে, এখন জামির কাছে আছে (125+10) বা 135 টাকা।

একই নিয়মে, 135  টাকায় মোট 7up কেনা যাবে  = (135 ÷ 20 ) = 6 টি এবং অবশিষ্ট থাকবে 15 টাকা।

আবার, 6 টি 7up এর বোতল জমা দিলে ফেরত পাওয়া যাবে 30 টাকা। তাহলে, জামির কাছে এখন থাকবে (30+15) বা 45 টাকা।

একইভাবে, 45  টাকায়  7up কেনা যাবে 2 টি এবং অবশিষ্ট থাকবে 5 টাকা।

নিয়মানুসারে, 2 টি 7up এর বোতল জমা দিলে ফেরত পাওয়া যাবে 10 টাকা

তাহলে, জামির কাছে এখন আছে (10+5) বা 15 টাকা।

20 টাকার কমে যেহেতু 7up কেনা যায় না, কাজেই জামি অবশিষ্ট টাকা দিয়ে নতুন করে 7up কিনতে পারবে না।

তাহলে, জামি মোট 7up কিনতে পেরেছে = (101 + 25 + 6 + 2)134 টি

সুতরাং, জামি মোট 134 জনকে ট্রিট দিতে পেরেছিলো।

অনেকেই আমাদের কাছে এই সুন্দর সমস্যাটির সমাধান পাঠিয়েছেন। আমরা মোট ১২ জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি। তারা হলেন-

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৪ এর বিজয়ী

 

যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
(আমাদের অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন  

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৩ এর সমাধান (Problem Weekly– 03 with Solution)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৩:  চট্টগ্রামের ছেলে তৌফিক তার বন্ধুদের মেজবান অনুষ্ঠানের দাওয়াত দিয়েছে। তবে শর্ত দিয়েছে যে, অনুষ্ঠানের দিন শুধুমাত্র লাল, সবুজ, সাদা কিংবা কালো- এই চার রঙের মধ্য যে কোন এক রঙের পোশাক পরিধান করে উপস্থিত থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানের দিন তৌফিকের বন্ধুদের মধ্যে আমাদের সবার পরিচিত সংখ্যাভাবুক সৌভিকও ছিল। সৌভিক অনুষ্ঠানে এতো মানুষজন দেখে অবাক! সে ঘুরে ঘুরে কতজন মানুষ এসেছে সেটি গণনা করা শুরু করে দিল। একসময় তৌফিকের সাথে  সৌভিকের সাথে দেখা হয়। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে শুরু করে-

তৌফিক:
দেখছিস কতো মানুষ এসেছে!

সৌভিক:
হ্যাঁ। আমি গুনে দেখলাম অনেক মানুষ এসেছে। তবে, যতজন এসেছে তাদের মধ্যে ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষ লাল পোশাক পরে এসেছে। ১৩৮ জন কালো রঙের পোশাক পরে এসেছে। আবার, যত জন মানুষ সাদা রঙের জামা পরেছে, তারচেয়ে তিন গুণ মানুষ সবুজ রঙের জামা পরেছে। আর, মোট উপস্থিত মানুষের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ সাদা কিংবা কালো রঙের পোশাক পরেছে।

তৌফিক:
তাই নাকি! আমি তাহলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তোমার এই ধাঁধাঁর সমাধান করার চেষ্টা করবো। আজকে কিন্তু সমাধান না করে বাসায় যাচ্ছি না!

আচ্ছা, তোমরা কি বলতে পারবে “মেজবান” অনুষ্ঠানে মোট কতজন মানুষ এসেছিল?

 Problem Weekly-03: Taufiq, a son of Chittagong, has invited his friends to the “Mezban” ceremony. However, a dress code has been set for the attendee: only red, green, white, or black; these four colors are the options to wear for the ceremony.
Among Taufiq’s friends, on the event day, Number-lover Souvik was also present. He was surprised to see so many people there. He turned around and started counting how many people had come to the program. At one point, Taufiq meets Souvik. They started to talk-

Taufiq:
You see how many people have come!

Souvik:
I saw a lot of people coming. However, one-sixth of those who came were wearing red clothes. 138 people came dressed in black. Three times as many people were wearing green clothes than those who wear white clothes. And one-fourth of the people present are wearing white or black clothes.

Taufiq:
Is that so?! I’ll try to solve it after having the meal. And, of course, I’ll not leave this place until I solve your riddle!

Well, can you tell me how many people came to the “Mezban” ceremony in total?

 

 

সমাধান: আমরা প্রথমে ধরি যে, মেজবান অনুষ্ঠানে মোট মানুষ এসেছে  x জন

তাহলে লাল পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা হবে  x/6 জন

আর কালো পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা হলো 138 জন

আবার, বলা আছে মোট মানুষের চার ভাগের এক ভাগ মানুষ হয় কালো কিংবা সাদা রঙের
পোশাক পরেছে।

তাহলে, সাদা রঙের পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা + কালো রঙের পোশাক পরেছে
এমন মানুষের সংখ্যা = x/4 

তাহলে সাদা রঙের পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা = (x/4 – 138)

আবার, সবুজ রঙের পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা, সাদা রঙের পোশাক পরা মানুষের তিন গুণ।

অর্থাৎ, সবুজ রঙের পোশাক পরেছে এমন মানুষের সংখ্যা = × (x/4 – 138)

তাহলে আমরা বলতে পারি,

 x/6 + 138 + (x/4 – 138) + [ 3 × (x/4 – 138)] = x 

বা, x/6 + x/4 + (3x/4) – 414 = x

বা, x/6 + (4x/4) = x + 414

বা, x/6 = 414

বা, x = 2484

সুতরাং, মেজবান অনুষ্ঠানে মোট 2484 জন মানুষ উপস্থিত ছিল। এটাই আমাদের উত্তর। 

আমরা মোট ৮ জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি। তারা হলেন-

সাপ্তাহিক সমস্যা-০৩ এর বিজয়ীদের তালিকা

 

যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
(আমাদের অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন 

সাপ্তাহিক সমস্যা-০২ এর সমাধান (Problem Weekly – 02 with Solution)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০২: একই পরীক্ষায় তিনটি ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। পরীক্ষাটি ছিল 100 নম্বরের। একটি ক্লাসে 22 জন ছাত্র ছিল এবং পরীক্ষায় তাদের ক্লাসের গড় নম্বর ছিল 87% । আরেকটি শ্রেণীতে 27 জন ছাত্র ছিল এবং পরীক্ষায় তাদের ক্লাস গড় নম্বর ছিল 83% । সর্বশেষ শ্রেণীতে 31 জন ছাত্র ছিল এবং পরীক্ষায় তাদের ক্লাসের গড় নম্বর ছিল 81%। পিয়াল, রাশিক এবং বিন্দু নামে তিনজন শিক্ষার্থী তাদের ফলাফল নিয়ে আলোচনা করছে। রাশিক বিন্দুর চেয়ে এক নম্বর কম পেয়েছে এবং পিয়াল বিন্দুর চেয়ে এক নম্বর বেশি পেয়েছে। তাদের পরীক্ষাপত্র পর্যালোচনা করার পর রাশিক এবং বিন্দু উভয়েই তাদের খাতায় একটি ত্রুটি খুঁজে পায়: উত্তরপত্রে দেয়া নম্বর যোগ করতে ভুল করা হয়েছে।  ফলস্বরূপ, পরবর্তীতে তাদের উভয়ের প্রাপ্ত নম্বর বেড়ে 92 হয়। পিয়াল আবিষ্কার করলো যে, তার উত্তর করা একটি প্রশ্নে কোন নম্বর দেয়া হয়নি। পুনরায় পিয়ালের খাতা যাচাই এর পর তার নম্বর বেড়ে 92 হয়। পিয়াল, রাশিক এবং বিন্দুর এই নম্বরের পরিবর্তনের জন্য সকল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার গড় নম্বর পরিবর্তি হয়ে 84% হয়।
তাহলে, নম্বর সংশোধনের আগে পরীক্ষাতে পিয়াল, রাশিক এবং বিন্দু কত নম্বর পেয়েছিল?

 Problem Weekly-02: Students in three different classes attended the same exam. The exam was marked out of 100. One class had 22 students in it and, their class average on the exam was reported as 87%. The second class had 27 students in it and, their class average on the exam was reported as 83%. The third class had 31 students in it and, their class average on the exam was reported as 81%. Three students- Pial, Rashik, and Bindu discussed their results. Rashik obtained a mark one less than Bindu and Pial obtained a mark one more than Bindu. Upon reviewing their papers, Rashik and Bindu both discovered additional errors on their papers. Both of their marks increased to 92. Pial discovered that one of his questions had not been marked. This review resulted in his mark increasing to 92 as well. These changes resulted in the exam average for all of the students in the three classes combined changing to exactly 84%.

What marks did Pial, Rashik, and Bindu originally have on their papers before the errors were corrected?

ছবি: বিন্দু, রাশিক ও পিয়াল তাদের পরীক্ষার নম্বর জানতে পেরেছে!

সমাধান: একটি ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের মোট নম্বর হবে সবার গড় নম্বর এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যার গুণফলের সমান।

পরীক্ষার খাতায় ভুল বা ত্রুটি ধরা পড়ার আগে-

22 জন শিক্ষার্থী যে শ্রেণিতে আছে তাদের মোট নম্বর ছিল: 22 × 87 = 1914

পরীক্ষার খাতায় ভুল বা ত্রুটি ধরা পড়ার আগে-

27 জন শিক্ষার্থী যে শ্রেণিতে রয়েছে তাদের মোট নম্বর ছিল: 27 × 83 = 2241

পরীক্ষার খাতায় ভুল বা ত্রুটি ধরা পড়ার আগে-

31 জন শিক্ষার্থী যে শ্রেণিতে রয়েছে তাদের মোট নম্বর ছিল: 31 × 81 = 2511

তাহলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা হলো: 22 + 27 + 31 = 80

এবং এই তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীর মোট নম্বর হলো: 1914 + 2241+ 2511 = 6666

আবার, পরীক্ষার খাতায় নম্বর কারেকশনের পর এই 80 জন শিক্ষার্থীর গড় নম্বর হয় 84।

তাহলে তাদের মোট নম্বর হবে: 80 × 84 = 6720

তাহলে মোট নম্বরের পরিবর্তন হয়েছে: 6720 6666 = 54

পিয়াল, রাশিক এবং বিন্দুর নম্বর বেড়ে যাওয়ার ফলে এই 54 নম্বর বৃদ্ধি পেয়েছে।

আচ্ছা, তাহলে নিচের ছকে ঝটপট হিসেব করে ফেলি-

 নাম প্রথমে পেয়েছে   নম্বর কারেকশনের পর পেয়েছে নম্বর বেড়েছে
বিন্দু পেয়েছিল x  নম্বর               92   92 – x
রাশিক পেয়েছিল x – 1 নম্বর               92    92 – (x – 1)
পিয়াল পেয়েছিল x + 1 নম্বর               92    92 – (x + 1)

তাহলে আমরা বলতে পারি-

[92 – x] + [92 – (x-1)] + [92 – (x+1)] = 54
বা, 276 – 3x = 54
বা, 3x = 226
বা, x = 74

অর্থাৎ, বিন্দু পেয়েছিল 74 নম্বর, রাশিক পেয়েছিল 73 নম্বর, এবং পিয়াল পেয়েছিল 75 নম্বর। এটাই আমাদের উত্তর।

আমরা মোট 7 জনের সঠিক উত্তর পেয়েছি। তারা হলেন-

problem weekly-02 winners list

যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক!
(আমাদের অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০১ এর সমাধান (Problem Weekly – 01 with Solution)

সাপ্তাহিক সমস্যা-০১: সংখ্যাপ্রেমী সৌভিক প্রদত্ত সংখ্যাগুলো {−7, −5, −3, −1, 0, 2, 4, 6, 8} থেকে তিনটি ভিন্ন সংখ্যা নির্বাচন করতে চাইলো। তারপর সে নির্বাচিত তিনটি সংখ্যা গুণ করে সবচেয়ে বড় গুণফলটি বের করার চেষ্টা করলো। সৌভিকের পাওয়া সর্বোচ্চ গুণফলটি কত হতে পারে?

Problem Weekly-01: Number-lover Souvik selects three different numbers from the set {−7, −5, −3, −1, 0, 2, 4, 6, 8}. He then tries to find the highest product of the three chosen numbers. What is the largest product that Number-lover Souvik can make?

সাপ্তাহিক সমস্যা-০১ এর সমাধানছবি: সৌভিক তার কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে গেছে!

সমাধান: যেহেতু আমাদেরকে গুণফল সর্বোচ্চ বানাতে হবে, এজন্য এই সেট থেকে আমাদেরকে বড় সংখ্যা নির্বাচন করতে হবে এবং সে গুণফল অবশ্যই একটি ধনাত্মক সংখ্যা হতে হবে।
কিন্তু এখানে একই সাথে ধনাত্মক সংখ্যা এবং ঋণাত্মক সংখ্যা রয়েছে। এটায় একটা ঝামেলা আছে! কেমন ঝামেলা?

আমারা জানি, দুইটি ঋণাত্মক সংখ্যার গুনফল একটি ধনাত্মক সংখ্যা। যেমন:

(−3) × (−5) = 15

আবার, একটি ঋণাত্নক সংখ্যা এবং একটি ধনাত্নক সংখ্যার গুণফল একট ঋণাত্নক সংখ্যা হয়। যেমন:

(−3) × 5 = 15

কাজেই, আমাদেরকে তিনটা সংখ্যাই ধনাত্মক বাছাই করতে হবে অথবা দুইটি ঋণাত্মক সংখ্যা এবং একটি ধনাত্মক সংখ্যা বাছাই করে হবে।

সুতরাং, তিনটি সংখ্যাই ধনাত্মক বাছাই করলে প্রাপ্ত গুণফল হবে-

4 × 6 × 8 = 192

এটাই কি সর্বোচ্চ গুণফল হবে? এর বেশি কি পাওয়া সম্ভব হবে না?

হ্যাঁ, সম্ভব হবে! আমরা যদি দুইটি ঋণাত্মক সংখ্যা এবং একটি ধনাত্মক সংখ্যা বাছাই করি, তাহলে প্রাপ্ত গুণফল হবে-

(-7) × (−5) × 8 = 280

এটাই আমাদের প্রাপ্ত সর্বোচ্চ গুণফল!!

অনেকেই আমাদের উত্তর পাঠিয়েছেন। আমরা মোট ১২ জন সঠিক উত্তরদাতা পেয়েছি। তাই আমাদের সাপ্তাহিক সমস্যা-০১ এর বিজয়ী মোট ১২ জন!

Tanay Paul Rajdhani High School
Sanjoy Kumar Rajshahi University
Namia Rauzat HURDCO International School
Areeba Adreeta Viqarunnisa noon school and college
Aariz Abdullah Shaheed Police Smrity College
Bihan Paul Ideal School and College
   
Sreema Chowdhury Bangladesh Mahila Samity Girls’ High School And College
Nawshin Anjum Murshed Rupkotha MUBC
Ahnaf Tahmid Saklain Rajshahi University School And College
Kawser Mahamud Junyed Hariharpara High School
Md Al Amin Notre Dame College Dhaka
Md.Sajedul Hasan Nasim University of Chittagong

যারা উত্তর পাঠিয়েছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আশা করি আপনাদের সমস্যা সমাধানের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক! 
(আমাদের অন্যান্য গাণিতিক সমস্যা দেখতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।)

এটাই জ্যামিতি

“Sire, there is no royal road to geometry”

শুরু করছি ইউক্লিডের একটি বিখ্যাত্য উক্তি দিয়ে। উক্তিটির ইতিহাসটাও চমৎকার। একবার রাজা প্রথম টলেমি ইউক্লিডকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘এলিমেন্টস ছাড়া জ্যামিতি শেখার সহজ কোনো পথ আছে কি?’

তখন ইউক্লিড তার সেই বিখ্যাত উক্তিটি করেন, যার বাংলা অনুবাদটি হচ্ছে কিছুটা এরকম-

“জ্যামিতি শেখার কোনো রাজকীয় পথ নেই”

যদিও আসলে এখানে “Royal Road” বলতে শর্টকার্টের কথা বোঝানো হয়। ইতিহাসের পাতা থেকে আমরা দেখতে পাই পারস্য রাজা Darius বা Darius the Great তার বিশাল সামাজ্যে শর্টকাটে দ্রুত যোগাযোগ ব্যাবস্থা স্থাপনের লক্ষে “The Royal Road” টি তৈরী করেছিলেন।

জ্যামিতির কথা বলতে শুরু করলে সবার আগে যে নামটি মাথায় আসবে সেটি হলো বিখ্যাত গ্রিক গণিতজ্ঞ ইউক্লিড। যার একটি বিখ্যাত্য গ্রন্থ হলো “এলিমেন্টস”। এটি জ্যামিতির জন্য বিখ্যাত হলেও এতে সংখ্যাতত্ত্বের অনেকগুলো বিষয় যেমন: পারফেক্ট নাম্বার ও মার্জেন প্রাইমের মধ্যকার সম্পর্ক এবং গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক বের করার ইউক্লিডীয় এলগরিদম বর্ণনা করা আছে।  ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকের গণিতবিদ ছিলেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, তার সময়কার বিভিন্ন জ্যামিতিক উপপাদ্যগুলিকে খুবই অল্প সংখ্যক স্বতঃসিদ্ধের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। মাত্র পাঁচটি স্বতঃসিদ্ধ থেকে সকল সমতলীয় বা ইউক্লিডীয় জিওমেট্রি ব্যাখ্যা করা যায়। সেগুলো হলো─

১) যেকোন দুইটি প্রদত্ত বিন্দুর মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।

২) কোন সরলরেখাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করা যায় কিংবা যেকোন বিন্দুতে সীমাবদ্ধ করা যায়।

৩) যেকোন বিন্দুকে কেন্দ্র ধরে ও যেকোন ব্যাসার্ধ (বৃত্তের যেকোন বিন্দু থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব) নিয়ে একটিমাত্র বৃত্ত আঁকা সম্ভব।

৪) সব সমকোণ সবসময় সমান।

৫) একটি প্রদত্ত সরলরেখার বহিঃস্থ একটি প্রদত্ত বিন্দু দিয়ে প্রথম সরলরেখার সমান্তরাল কেবলমাত্র একটি সরলরেখা আঁকা সম্ভব।

জ্যামিতির সবচেয়ে চমৎকার জিনিস হলো এটা দৃশ্যমান। আমরা চোখের সামনে ছবি এঁকে বুঝতে পারি, প্রমাণ করতে পারি, খেয়াল খুশি মত প্রয়োজনীয় চিত্র আঁকতে পারি। তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, প্রমাণ করতে হবে যুক্তি দিয়ে, স্বীকার্য দিয়ে, উপপাদ্য দিয়ে। এখানে নিজের মনে হলো তাই এটাই হতে হবে, এরকম কিছু কাজ করে না। অথবা, অমুক এটা বলছে বলে এই রেখাটা সমদ্বিখন্ডক হবে─ এরকম কথার কোনো ভিত্তি নেই। এবং প্রমাণ করতে হবে ধাপে ধাপে, যে কোন প্রমাণের প্রতিটি ধাপকে হয় কোন স্বতঃসিদ্ধ অথবা পূর্ব-প্রমাণিত কোন উপপাদ্য দিয়ে সমর্থিত হতে হয়। সঠিকভাবে জ্যামিতির চিত্র আঁকতে পারলে তোমার চোখের সামনে অনেক কিছু দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। যেখান থেকে তুমি খুঁজে পেতে পারো তোমার কাঙ্ক্ষিত তথ্য, যা প্রমাণের বিভিন্ন ধাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ইউক্লিডীয় জ্যামিতি খুব সুন্দর করে পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করা আছে। আছে অনুশীলনীর জন্য অনেকগুলো সমস্যা। যে কেউ যদি বুঝে বুঝে সময় নিয়ে এই সমস্যাগুলো সমাধানের চর্চা করে, তাহলে এই বিষয়ে প্রাথমিক ভিত্তি তৈরী হয়ে যাবে। এরপর, জ্যামিতির অন্য যে কোন বই পড়তে কিংবা তাত্ত্বিক বিষয় বুঝতে খুব একটা সমস্যা হবে না।

জ্যামিতির সাহায্যে গণিতের আরো অনেক বিষয়ের গাণিতিক প্রমাণ আমরা সহজে বুঝতে পারি। আমরা বীজগণিতের প্রাথমিক ধারণা লাভ করার সময় বন্ধনীর ব্যবহার, একাধিক চলকের মধ্যে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ ইত্যাদি কিভাবে হয় সেটা শিখে থাকি। আসলে (a + b2 = a 2 + 2ab + 2  এটা কিভাবে হলো সেটা জ্যামিতিক চিত্র দিয়ে সহজে বোঝানো যায়।

 

ছবি: বীজগণিতের (a + b2 সূত্রের সচিত্র জ্যামিতিক ব্যাখ্যা

আবার, আমরা সবাই সংখ্যা চেনার পর থেকে কিন্তু সংখ্যারেখার সাথে পরিচিতি হই। সংখ্যারেখায় সকল বাস্তব সংখ্যাকে কিন্তু চিহ্নিত করা যায়। পূর্ণ সংখ্যাগুলো আমরা সহজেই দেখাতে পারি সংখ্যারেখাতে । আচ্ছা, তোমরা কি অমূলদ সংখ্যা বা √2 সংখ্যাটিকে সংখ্যারেখায় দেখাতে পারবে? জ্যামিতির ধারণা দিয়ে কিন্তু চাইলেই √2 সহ আরো অনেক অমুলদ সংখ্যাকে সংখ্যারেখায় দেখানো সম্ভব। এখন একটু চিন্তা করো, কেন আমি সকল অমূলদ সংখ্যা না বলে আরো অনেক অমূলদ সংখ্যা বলেছি? কেন?

এছাড়া, তোমরা যারা অরিগ্যামি, ট্যানগ্রাম ইত্যাদির নাম শুনেছো তারা হয়তো বুঝতে পারছো এগুলোর পেছনে জ্যামিতির অনেক ধারণা লুকিয়ে আছে। এগুলো নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক গল্প আছে, খুঁজে দেখতে পারো। একটা সমস্যা দিচ্ছি, সমাধান করার চেষ্টা করতে পারো:
ট্যানগ্রামে আসলে একটি বর্গাকার কাগজকে বিভিন্ন উপায়ে সাতটি টুকরো করা হয়। সাতটি টুকরোর মধ্যে পাঁচটি ত্রিভুজ, একটি সামান্তরিক এবং একটি বর্গ পাওয়া যায়। একটু চিন্তা করে বলো তো, ছোট বর্গটির ক্ষেত্রফল মূল কাগজের কত অংশ হতে পারে?

 

ছবি: ট্যানগ্রাম

আসলে জ্যামিতি কিন্তু এখন শুধুমাত্র ভূমির পরিমাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। এটি যুক্তি এবং প্রমাণের একটি চমৎকার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থাপন। জ্যামিতি হলো একটি ছোট জানালা যেটির সাহায্যে বীজগণিতের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশিত হয়, যার মাধ্যমে তুমি ‘কেন’ এর উত্তর আবিষ্কারের আনন্দে বিভোর হয়ে যাবে।

“Geometry is the most complete science” — David Hilbert

এটাই জ্যামিতি!!
(এ ধরণের আর্টিকেল আরো পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।)

লেখক: আশরাফুল-আল-শাকুর (ইমেইল: bm.ashrafulshakur@gmail.com)

সব সম্ভবের সম্ভাব্যতা

তুমি কি কখনো একটা ১ টাকার কয়েনকে টস করে কোন খেলা শুরু করতে দেখেছ? অথবা কখনো ১ টাকার কয়েনকে টস করে ক্রিকেট খেলায় কে আগে ব্যাট করবে, আর কে আগে বল করবে এটা নির্ধারণ করেছ? 

আচ্ছা বলতো, একটা এক টাকার কয়েনকে টস করলে শাপলা উঠার সম্ভাবনা কত? একটু চিন্তা করে দেখো…

চিত্র: ১ টাকার পয়সার দুই পিঠ

একটু চিন্তা করলেই আমরা কিন্তু বলে দিতে পারি, একটা ১ টাকার কয়েন টস করলে হয় মানুষের ছাপটা উঠবে, না হয় শাপলার ছাপের পিঠটা। অর্থাৎ, ফিফটি-ফিফটি চান্স বা শাপলার পিঠ উঠার সম্ভাব্যতা অর্ধেক।

আবার মনে কর, তোমার বাসার সবাই মিলে লুডু খেলতে বসলে। তুমি মাত্র লুডুর ছক্কা নেড়ে বোর্ডে ছুঁড়ে মারলে। এখন বলো তো, ছক্কার গুটি বোর্ডে পড়া মাত্রই ৫ উঠার সম্ভাবনা কত? এটাও তুমি জানো। যেহেতু ছক্কার ছয়টা পিঠ আছে, আর এই ছয়টা পিঠে ১ থেকে ৬ পর্যন্ত সংখ্যা লিখা আছে, তাই ৫ উঠার সম্ভাবনা ছয় ভাগের এক ভাগ।

এখান থেকে আমরা একটা জিনিস খেয়াল করতে পারি যে,
কোন একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা = অনুকূল ঘটনার ফলাফলের সংখ্যা / মোট ফলাফলের সংখ্যা

অনুকূল ঘটনার ফলাফল বলতে আমরা, একটি ঘটনার ঘটার সকল সপক্ষের ফলাফল সংখ্যাকে বুঝিয়েছি। যেমন, ছক্কার গুটিতে জোড় সংখ্যা আছে ৩ টি। সুতরাং জোড় সংখ্যা ওঠার সম্ভাব্যতা নির্ণয়ের জন্য অনুকূল ঘটনার ফলাফল ৩ টি।

অতএব, কয়েন টসের ক্ষেত্রে শাপলা উঠার সম্ভাব্যতা
= শাপলা ছাপযুক্ত পিঠের সংখ্যা / কয়েনের মোট পিঠের সংখ্যা = ১/২

ছক্কার গুটিতে ৫ উঠার সম্ভাব্যতা
= ৫ অঙ্কটি লেখা আছে এমন তলের সংখ্যা / ছক্কার মোট তলের সংখ্যা = ১/৬

অতএব সম্ভাব্যতায় যে কোন একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যাচাইয়ের আগে আমাদের তাই বের করে নিতে হয়, সেই ঘটনার ক্ষেত্রটা কত বড়(মোট সংখ্যা, ক্ষেত্রফল, পরিমাণ ইত্যাদি)। তারপর বের করতে হয়, ঘটনাটি ঘটবেই এমন ক্ষেত্রটাই বা কতটুকু (অনুকূল ঘটনাক্ষেত্রের আকার)। তারপর অনুকূল ঘটনা ক্ষেত্রকে লব আর মোট ঘটনাকে হর ধরে আমরা সম্ভাব্যতা নির্ণয় করি। 

এবার একটা ভিন্ন কিছু নিয়ে চিন্তা করা যাক। মনে কর, তুমি একটি রোবট বানালে, যে গড়পড়তা প্রতি চারটি তথ্যের তিনটি সঠিক তথ্য দেয় । এখন তোমার বন্ধু সাদ তোমার বাসায় বেড়াতে এসেছে। সে তোমাকে খুঁজে না পেয়ে তুমি কোথায় আছ সেটা রোবটটাকে জিজ্ঞাসা করল। রোবটটা  সাদকে প্রথমে উত্তর দিকে, তারপর পূর্ব দিকে এবং এরপর দক্ষিণে যেতে বলল। সেখানে গিয়ে সাদ তোমাকে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কত? খেয়াল কর, সাদ কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারছে না, রোবটের দেয়া তিনটি তথ্যের প্রত্যেকটি তথ্যই সঠিক কিনা। সুতরাং, আমরা আগের মত সহজ ভাবে সম্ভাবনাটা খুঁজে বের করতে পারবো না।

 

চিত্র: সাদকে রাস্তা বাতলে দিচ্ছে রোবট

আমরা একটা ভিন্ন রাস্তায় সম্ভাব্যতাটা নির্ণয় করতে পারি। যেহেতু রোবটটি গড়পড়তা প্রতি চারটি তথ্যের তিনটিই সঠিক উত্তর দেয়, সুতরাং রোবটটি যখন সাদকে উত্তরে যেতে বলেছে তখন তথ্যটি সঠিক হওয়ার সম্ভাব্যতা ৩/৪, পূর্বে যাওয়ার তথ্যটিও সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা ৩/৪ এবং দক্ষিণে যাওয়ার তথ্যটিও সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা ৩/৪

সুতরাং, রোবটের দিক নির্দেশনা শুনে সাদের তোমাকে খুঁজে পাবে তার সম্ভাব্যতা
= ১ম তথ্য সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা এবং ২য় তথ্য সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা এবং ৩য় তথ্য সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা
= ৩/৪ * ৩/৪ * ৩/৪ = ২৭/৬৪

একটা মজার ব্যাপার কি খেয়াল করলে? এখানে আমরা প্রতিটি একক সম্ভাব্যতাকে আগে খুঁজে বের করেছি। তারপর তাদের গুণ করেছি। কিন্তু এখানে গুণ কেন করলাম? যোগ কেন করলাম না? গণিতবিদেরা এমন সব সমস্যার সমাধান করার জন্য যে কোন ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পার্থক্য করতে চেয়েছেন। এর মধ্যে দুইটি হল, স্বাধীন ঘটনা ও অধীন ঘটনা। নাম শুনেই বুঝতে পারছো, স্বাধীন ঘটনার ক্ষেত্রে দুইটি ঘটনার একটি ঘটার সম্ভাবনা অপরটি ঘটার উপর নির্ভর করে না। যেমন ধর, দুইটি এক টাকার কয়েনকে আমরা পাশাপাশি টস করলে একটায় শাপলা ওঠার সম্ভাবনা অপরটিতে শাপলা ওঠার উপর নির্ভর করে না। তাই ঘটনা দুইটি স্বাধীন।

অন্যদিকে অধীন ঘটনায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অপর ঘটনা ঘটার উপর নির্ভর করে। যেমন: যদি একটা বাক্সে টা লাল বল আর টা হলুদ বল থাকে আর তুমি বাক্স থেকে প্রথমে একটা বল তুলে নাও তাহলে সেটা লাল হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু, ৪/৭ । এখন বলটা যদি লাল হয় আর তুমি যদি ওই বলটা বাক্সে না রাখ তাহলে বাক্সে লাল বল হয়ে গেলো ৩ এবং মোট বলের সংখ্যা হয়ে গেলো ৬। আরো একটা বল তুলে ফেলো, নতুন বলটি লাল হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু ৩/৬ বা ১/২ ! খেয়াল কর, এখানে পরের বলটা লাল হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু প্রথম বলটা লাল হওয়ার সম্ভাবনার উপর নির্ভর করছে। তাই ঘটনা দুইটি একে অপরের অধীন বা নির্ভরশীল।

এখন যদি আমরা রোবটের সমস্যায় ফিরে যাই, তাহলে আমরা দেখতে পারব, রোবটটা তিনটা দিকনির্দেশনার একটা ভুল দিলেই সাদ তোমাকে খুঁজে পাবে না। যেহেতু প্রত্যেকটি নির্দেশনা আলাদা আলাদা ভাবে ঘটেছে, এবং আগের নির্দেশনা ও পরের নির্দেশনা সত্য হলেই কেবল সাদ তোমাকে খুঁজে পাবে তাই আমরা সম্ভাব্যতাগুলোকে গুণ করেছি! আরেকটু বাড়িয়ে বললে, পূর্বে যাওয়ার নির্দেশনা সত্য হবে যদি উত্তরে যাওয়ার নির্দেশনা সত্য হয় যা, উত্তরে যাওয়ার সম্ভাবনা সত্য হওয়ার ৩/৪ গুণ। যেহেতু উত্তরে যাওয়ার নির্দেশনা সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা ৩/৪, তাই পূর্বে যাওয়ার নির্দেশনা সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা ৩/৪ * ৩/৪

আবার যদি দুই বা তার বেশি ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা ঘটলে অপর ঘটনা বা ঘটনাগুলো একই সাথে না ঘটে তাহলে ঘটনা দুইটি পরষ্পর বর্জনশীল। যেমন কয়েন টস করলে শাপলা উঠলে মানুষ উঠবে না। ঠিক তার উল্টোভাবে, যদি দুই বা ততোধিক ঘটনা একইসাথে ঘটতে পারে তাহলে ঘটনা দুইটি পরষ্পর অবর্জনশীল।
যেমন: ছক্কার গুটিতে একইসাথে জোড়সংখ্যা ও মৌলিক সংখ্যা ওঠার ঘটনা একটি অবর্জনশীল ঘটনা।
বলতে পারো ছক্কার গুটিতে এমন কয়টি সংখ্যা আছে যারা একই সাথে জোড় ও মৌলিক?   

এতক্ষনে তুমি হয়ত বেশ কিছু ব্যাপার খেয়াল করে ফেলেছো, আমাদের যেকোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা কিন্তু এর চেয়ে বেশি নয়। আবার, আমরা এমন কোন ঘটনা দেখিনি যেটা ঘটার সম্ভাব্যতা । সুতরাং আমরা বলতে পারি, যেকোন একটি ঘটনা A ঘটার সম্ভাব্যতা,

P(A) > ০ এবং P(A) < ১

বা, < P(A) < ১

অর্থাৎ, অসম্ভব ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা এবং নিশ্চিত ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা । তাই আমরা লিখতে পারি,

P(A) ≤ ১

আবার ধর, তুমি তোমার স্কুলের ল্যাবে কোন একটা পরীক্ষা করে পরীক্ষণের অনেকগুলো ফলাফল A, B, C… ইত্যাদি পেলে। সুতরাং, এদের প্রত্যেকের ঘটার সম্ভাব্যতা,

P(A) + P(B) + P(C) + …….. = ১

আমরা এই ধারণাগুলো ব্যবহার করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করবো। গণিতে সম্ভাব্যতার ধারণা খুব পুরনো কোন ধারণা নয়। মাত্র ৪০০ বছর আগে এই ধারণার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। পাশা খেলার বোর্ড থেকে গণিতের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হয়ে ওঠার গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ! পাকা জুয়াড়ি চেভালিয়ার দ্য মেরে (Chevalier de Mere) জুয়া খেলার বোর্ডে কোন দানটি উঠলে বেশি লাভজনক হবে তা নিয়ে এন্টনি গম্বুড (Antoine Gombaud) এর সাথে ঝগড়া বাধিয়ে গণিতবিদ প্যাসকেল (Pascal) আর ফার্মার (Fermat) কাছে সমাধান চেয়ে চিঠি লিখলেন। সেখানে থেকে উৎপত্তি হয় গণিতের এই চমৎকার তত্ত্বটির। ১৮১২ সালে, ল্যাপ্লাস (Laplace) এই তত্ত্বটিকে জুয়া খেলার বোর্ড থেকে বাস্তব জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ নিয়ে এসে আলোচনা করেন তার Théorie Analytique des Probabilités বইয়ে। এভাবেই গণিত আর বিজ্ঞানের জগতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে সম্ভাব্যতার ধারণা।

শেষ করার আগে চলো আরেকটু সময়ের জন্য আমরা আবার প্রথম প্রশ্নে ফিরে যাই। তোমার কি মনে আছে, আমি তোমাকে বলেছিলাম, একটা এক টাকার কয়েনকে টস করলে শাপলা উঠার সম্ভাবনা ১/২?                 

কিন্তু, বাস্তবে কথাটি কতটুকু সত্য? এটার মানে কি তুমি যদি একটা ১ টাকার কয়েন হাতে নিয়ে ২ বার টস করো, তাহলে একবার মানুষ আরেকবার শাপলা উঠবে? কয়েকবার নিজে করে দেখলে খেয়াল করবে, প্রতি দুইবার টসে সবসময়ই এক বার মানুষ আরেকবার শাপলা উঠছে না। তাহলে, কি আমাদের হিসাবটা ভুল? কিন্তু ভুল হলে কি আমরা সম্ভাব্যতাকে গণিতে বা বিজ্ঞানে এত ব্যবহার করতে পারতাম?

নিশ্চয়ই ১ টাকার কয়েনে ১ উঠার সম্ভাব্যতা ১/২ হওয়ার ব্যাপারটা সত্য হওয়ার পিছনে আরও কিছু যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে দেখানো যেতে পারে। সেটা কি, চিন্তা করে বের করতে পারবে?  

সম্ভাব্যতার গভীর চিন্তাটা আসলে এখান থেকেই শুরু হয়।   

সেই চিন্তার জগতে তোমাকে স্বাগতম!
(এ ধরণের আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।)

লেখক: আহমেদ শাহরিয়ার শুভ (মেইল: shahriar@matholympiad.org.bd)